ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পৃথিবীকে পরমাণু যুদ্ধের হাত থেকে মুক্ত করতেই হবে

আফতাব চৌধুরী, সাংবাদিক-কলামিস্ট
পৃথিবীকে পরমাণু যুদ্ধের হাত থেকে মুক্ত করতেই হবে

ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। দেশ দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পর হতেই এক দেশ অন্য দেশের প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন। তার মূল কারণ কাশ্মীর। এ কাশ্মীর নিয়ে তারা ছোট বড় মিলে বেশ ক’টি যুদ্ধ করেছে, রক্তপাত হয়েছে প্রচুর। এতে দু’দেশের মধ্যে কারোরই তেমন কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু প্রচুর সৈন্য ও সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে আর কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে কাশ্মীরের জনগণকে। তারা নানা রকম নির্যাতন নিপীড়নের শিকার। ১৯৪৭ সালের পর হতে আজ পর্যন্ত এ কাশ্মীরে যে কত মানুষ নিহত, আহত হয়েছে, তার কোনো হিসাব কেউই দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কাশ্মীরের জনগণ তাদের স্বাধীনতা লাভের জন্য সংগ্রাম করে আসছে তারা মরছে আবার মারছেও। দীর্ঘ ৫ যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও লাভ তেমন কিছু হয়নি। কাশ্মীরের বিষয়টা বারবার জাতিসংঘে উত্থাপন করা হয়।

সবশেষে জাতিসংঘের ব্যপারটি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, কলম্বিয়া, চেকস্লোভাকিয়া ও আর্জেন্টিনা এ ৫টি দেশকে নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

এ পরিকল্পনার প্রধান শর্তই ছিল জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জম্মু ও কাশ্মীরে একটি গণভোট অনুষ্ঠান। প্রথমবার পাকিস্তান এ প্রস্তাবে সম্মতি জানালেও ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিতীয়বার সংশোধিত আকারে প্রস্তাবটি উত্তাপন করা হলে পাকিস্তান এ ব্যাপারে আপত্তি তোলে।

তবে উভয় দেশ যাতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখে, সে উদ্দেশে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিক হয়। এ চুক্তির ফলে কাশ্মীর দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়, এক ভাগ পাকিস্তানের অন্য ভাগ ভারতের দখলে। এভাবেই ভূস্বর্গ নামে খ্যাত কাশ্মীর দু’ভাগে ভাগ হয়ে বাড়তে থাকে অধিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা। এভাবেই চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। জাতিসংঘ বলতে গেলে এক্ষত্রে ব্যর্থতারই পরিচয় দিয়ে আসছে।

এদিকে গেল ক’মাস ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটতে থাকে। দুই দেশই বিভিন্ন দেশ থেকে যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করে সৈন্য সংখ্যা বাড়াতে থাকে। নিজ নিজ দেশেও নানা প্রকার যুদ্ধসামগ্রী উৎপাদনও করতে থাকে। উভয় দেশই এখন যুদ্ধের মুখোমুখি এবং উভয় দেশই পারমাণবিক বোমার অধিকারী। যতদূর জানা যায়, এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা তাক করে বসে আছে, যদি উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, ব্যবহৃত হয় পারমাণবিক বোমা তাহলে শুধু দেশ দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে আশপাশের দেশগুলো। মারা যাবে কোটি কোটি মানুষ। শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যা মোটেই কারো কাম্য হওয়া উচিত নয়।

আমরা পরমাণবিক যুদ্ধের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে সংঘটিত হয়েছিল মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ। এর তিন দিনের মাথায় জাপানেরই নাগাসাকি শহরে স্পর্ধিত যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র আমেরিকা আর তার সহযোগীরা আবারও পারমাণবিক বোমার হামলা চালিয়েছিল। মূর্তিমাণ মৃত্যুদূতের মতো ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে দুটো ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম বোমা এই দুই শহরে নিক্ষিপ্ত হয়ে চারপাশের তাপমাত্রা চার হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তুলে দিয়েছিল। আগুনে পুড়ে, তাপে ঝলসে, তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ও আঘাতজনিত কারণে হিরোশিমাতে ৬০ হাজার ও নাগাসাকিতে ৪০ হাজার মানুষ সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে বলি হন প্রায় দুই লাখ মানুষ। পরমাণু বোমার তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ থেকে বেঁচে থাকা মানুষের দেহে এমন অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আজও বয়ে চলেছে। এই বীভৎসতা সারা বিশ্বের সংবেদনশীল মানুষের মধ্যে তোলপাড় তুলেছিল। এর মধ্যে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী, চিন্তানায়ক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিক কর্মীরাও ছিলেন। এরা ভাবিত হয়েছিলেন মানবজাতিকে চিরকালের জন্য শক্তির জোগান দিতে পারে সেই আবিস্কারই কেন মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়? তারা প্রশ্ন তুলেছিলেন যুদ্ধই কি ভবিতব্য? কোনো পরিত্রাণ কি নেই? যুদ্ধের উৎস কোথায়? এইসব প্রশ্নের সমাধান খোঁজার সৎ প্রয়াস তাদের শ্রমিকশ্রেণি ও শ্রমজীবী জনতার আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী বিরোধী সংগ্রামের পাশে টেনে এনেছিল এবং পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে নির্মোহ বিশ্লেষণে উৎসাহিত করেছিল।

যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যবনিকা পতন হয়েছিল হিরোশিমা ও নাগাসাকির বীভৎসতার মধ্য দিয়ে তার কারণ কী ছিল? মানবসমাজের ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেদিন থেকে মানবসমাজ শ্রেণি বিভক্ত হয়েছে এবং জমি তথা সম্পদের উপর কবজা টিকিয়ে রাখার জন্য মালিকশ্রেণি রাষ্ট্র তৈরি করেছে, সেদিন থেকে যুদ্ধের বিরাম নেই। শুধু রাজায় রাজায় হানাদারি যুদ্ধ নয়, প্রজাকে শাসনে রাখার জন্য তাদের উপরও যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আধুনিক পুঁজিবাদী যুগে এই যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধ রূপে উত্তীর্ণ হয়েছিল, কারণ পুঁজিবাদ এরইমধ্যে এক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে নিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী বৃহৎ একচেটিয়া কোম্পানিগুলোর জন্ম দিয়েছে, বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে কবজা করে নিয়েছে। বৃহৎ পুঁজিগোষ্ঠীগুলো অধিকৃত রাষ্ট্রগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ কাঁচামাল, শ্রমশক্তি, ব্যবসার ক্ষেত্রের উপর দখল ও বৃদ্ধির নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যায়। একের অধিকৃত জমি অন্যের দখলের প্রচেষ্টার অনিবার্যতা হিসাবে চলে আসে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধ, নারকীয় বীভৎসতা।

১৯৩০-এ পুঁজিবাদী বিশ্বের মহামন্দা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং জাপানের তেল শক্তি, ব্যাঙ্ক, ভারী শিল্প, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম উৎপাদনকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ভয়ঙ্করভাবে গ্রাস করেছিল এবং নতুন বাজার, কাঁচামালের ক্ষেত্র ও উপনিবেশ দখল করা ছাড়া এদের কাছে পরিত্রাণের কোনো উপায় ছিল না। ইদানীংকালে আমরা যেমন দেখছি বিধ্বংসী অস্ত্রের মিথ্যা অজুহাত দিয়ে তেলের একচেটিয়া কোম্পানিগুলোকে তেলের খনির দখল দেবার জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আর তার সহযোগী বা ইরাক দখল করে নিয়েছে, লিবিয়াকে গদ্দাফির শাসনমুক্ত করেছে বা আফগানিস্তান ও সিরিয়ার ধারাবাহিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে- তেমনি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হিটলার, মুসোলিনি বা তোজোর মতো রাষ্ট্রনেতাদের মঞ্চে হাজির করেছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দখলে থাকা বিশ্বের আশি শতাংশ উপনিবেশগুলোকে নিজেদের কর্তৃত্বে নিয়ে আসতে।

অন্যদিকে, আমেরিকা নিজেকে ‘গণতন্ত্রের অস্ত্রাগার’ ঘোষণা করে দু’পক্ষের যুদ্ধ প্রস্তুতির ফায়দা নিয়ে অস্ত্র, যুদ্ধসরঞ্জাম ইত্যাদির বাজার কবজা করে। শুরু হয়ে যায় উপনিবেশ লুন্ঠনের, বাজার দখলের, কাঁচামালের উৎস দখলের বিশ্বযুদ্ধ। পরবর্তী সময়ে আমেরিকা যুদ্ধে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষভুক্ত হয়ে যোগদান করে নতুন ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা স্থাপন অর্থাৎ নিজেকে উপনিবেশগুলোর কর্তৃত্বকারী অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করার শর্তে। এটা স্পষ্ট যে একচেটিয়া কোম্পানিগুলো তাদের বিশ্বব্যাপী কারবারের মুনাফা বজায় রাখা ও বাড়িয়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে যুদ্ধে নামিয়ে সাধারণ জনগণের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল এবং বিংশ-শতাব্দীর বিজ্ঞানের সব উৎকর্ষকে মানবজাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। ওই সময় একমাত্র ব্যতিক্রমী ভূমিকা ছিল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের। নিজেকে ও বিশ্বকে এই যুদ্ধ থেকে বাঁচাবার প্রয়াস সত্ত্বেও সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর আত্মরক্ষার্থে শ্রমিক শ্রেণি যুদ্ধ আহ্বান করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পট-পরিবর্তনে এই ঘটনা ব্যাপক ও গভীর তাৎপর্যবাহী।

প্রশ্ন আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে যখন জার্মানি এরমধ্যেই আত্মসমর্পণ করেছে, জাপানের আত্মসমর্পণ শুধু সময়ের অপেক্ষা, তখন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডার যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুত পরমাণু বোমার প্রয়োগের কারণ কী ছিল? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের নির্দেশে গঠিত টার্গেট সিলেকশন গ্রুপের বক্তব্য থেকে এর উত্তর পাওয়া যায়। এ থেকে জানা যায়, জাপানের উপর মনস্তাত্ত্বিক বিজয়ের জন্য এবং পরমাণু বোমার ‘দৃষ্টিনন্দন’ ধ্বংস ক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বের জনগণকে জানান দেওয়ার জন্য এটা করা হয়। স্পষ্টত যুদ্ধ পরবর্তী ফয়সালা অনুযায়ী সাম্রাজ্যবাদীদের নতুন উপনিবেশিক ব্যবস্থার নতুন পান্ডা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমেরিকা এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল। পরবর্তী ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে মুনাফাভিত্তিক ব্যবস্থার একচেটিয়া স্তরে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পরমাণু অস্ত্র একটি তরুপের তাস হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। আজও পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোই বিশ্বের সব রাষ্ট্রের কর্তৃত্বে আছে এবং নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের উপর একচেটিয়া নানা রকম বিধিনিষেধ চালু করে রেখেছে।

৭৯ বছর ধরে পৃথিবীতে আর কোথাও পরমাণু বোমা প্রয়োগ না করা হলেও তার গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে। পৃথিবী আজও পরমাণু যুদ্ধের বিপদ থেকে মুক্ত নয় বরং অনেক রাষ্ট্রেই গোপনে বা প্রকাশ্যে পরমাণু বোমা বানানো হচ্ছে ও ‘সফল পরীক্ষা’র মধ্য দিয়ে অন্য রাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত না হলেও যুদ্ধ অনবরত জারী আছে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। যুদ্ধে বিজয়ের জন্য যেহেতু সকল পন্থাই ‘বৈধ’, ফলে চলমান ‘চিরাচরিত’ হাতিয়ারের যুদ্ধ কখন ‘অচিরাচরিত’ হাতিয়ারের যুদ্ধের পরিণতি লাভ করছে বা করবে, তা কেউ বলতে পারে না। এজন্য মাঝেমধ্যেই রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে। যাই হোক, বিগত সময়ে পরমাণু যুদ্ধ, রাসায়নিক যুদ্ধ সর্বোপরি বিশ্বযুদ্ধ একচেটিয়া পুঁজিপতিদের জন্যও বিপদ ডেকে এনেছে। এর একটা কারণ, এই যুদ্ধগুলো ব্যাপক জনগণকে নিজের দেশের রাষ্ট্রশক্তির যুদ্ধপ্রয়াসের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ ও সংগঠিত করেছে। কিন্তু ঘটনা থেকে দেখা যায় জনগণের যুদ্ধবিরোধী প্রবণতা রাষ্ট্রগুলোকে তথা তাদের নিয়ন্ত্রক একচেটিয়া পুঁজিগোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধ থেকে বিরত করতে পারেনি।

ভবিষ্যতে পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগ থেকে বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোকে যে বিরত রাখতে পারবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এছাড়া শুধু রাষ্ট্রে রাষ্ট্রেই নয়, সিরিয়া, মিশর বা লিবিয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিবদমান পুঁজি গোষ্ঠীগুলো একচেটিয়ার মদতে পারস্পরিক গৃহযদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং জনগণকে এর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি শিল্পের জমি ও কাঁচামালের প্রয়োজনে জণগণকে উৎখাত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র নিজেই তার জনগণের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে যার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই অঞ্চলেই দেখা যাচ্ছে। শুধু জনগণের যুদ্ধবিরোধী মানসিকতাই যথেষ্ট নয়। যুদ্ধের উৎস সম্পর্কে সজাগ ও সংগঠিত জনগণই পারে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ প্রয়াসকে মোকাবিলা করতে। নয়া উপনিবেশিক ব্যবস্থায় সকল রাষ্ট্রই কোনো না- কোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিয়ন্ত্রণে আছে।

এরা ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ আওয়াজ তুলে জনগণের যুদ্ধ বিরোধী মানসিকতাকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। কিন্তু যুদ্ধের উৎস সাম্রাজ্যবাদকে আড়ালে রাখে। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রের জনগণকে নিজেদের প্রয়োজনে কখনো মেকি জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা নামে, আবার কখনো প্রাদেশিকতা, আঞ্চলিকতাবাদের নামে যুদ্ধ প্রয়াসে জড়িয়ে নেয়।

সুতরাং সমাজবিজ্ঞানের আলোকে এই বিষয় স্পষ্ট করতে হবে যে, যতদিন মুনাফাভিত্তিক ব্যবস্থা ও তার স্বার্থবাহী রাষ্ট্র বজায় থাকবে ততদিন যুদ্ধ, এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের খাঁড়া জনগণের ঘাড়ের উপর ঝুলতেই থাকবে। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে সজাগ হয়ে জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, সেই দিনের জন্য যখন বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী জনগণ নিজ্বস্ব সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত