ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি,এখনো দিচ্ছে না

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি,এখনো দিচ্ছে না

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকারের পতনে প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। গণতন্ত্রহীনতা, বাকস্বাধীনতা হরণ, অন্যায়, অবিচারকবলিত দেশকে সংস্কার করে আদর্শ ও উন্নত করার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ দ্রুত শুরু করা এখন সময়ের দাবি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পরপর কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মারফত পাওয়া গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এরইমধ্যে ছাত্র-জনতাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে ও আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই দেশ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আমাদের, কেউ যাতে কোনো ধরনের লুটপাট, সাম্প্রদায়িক হামলা ও কোনো ধরনের উসকানিতে প্ররোচিত না হন। মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সবার জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ছাত্র-জনতার এ গণঅভ্যুত্থান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের ছিল না। যদিও পতিত শেখ হাসিনা সরকার একে নানাভাবে রাজনৈতিক রং ও জঙ্গিদের বলে আখ্যায়িত করার অপচেষ্টা করেছে। তবে সরকারের এই পুরোনো ‘জঙ্গি কার্ড’ কোনো কাজে আসেনি। বরং যেসব স্থাপনা ধ্বংস ও সংখ্যালঘুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা হয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দেশকে এখন দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।

যত দেরি হবে, তত সমস্যা ও সংকট প্রকট হয়ে উঠবে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মী ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না, এর নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন স্থাপনা এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে তাদের ধ্বংসাত্মক কাজ করার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের প্রতিশোধের স্পৃহা ভয়াবহ আকারে প্রকাশিত হতে পারে।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে চিন্তা করি না। সরকার চলে গেলে আপনাদের কি হবে, তা দেখবেন। তার এ ধরনের ভিডিও বার্তা থেকে দেশ অস্থিতিশীল করার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ভারতীয় পত্র-পত্রিকাগুলোও পতিত হাসিনা সরকারের জন্য অনেকটা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পরপর ভারতীয় পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তার অনলাইনের বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে তাৎক্ষণিকভাবে লিখেছে, শেখ হাসিনা ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু ছিলেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর তার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারাল নয়াদিল্লি। তাই শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশত্যাগ ভারতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা সেনাবাহিনীকে শেখ হাসিনাকে সরানোর অনুঘটক হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর ভারতের সবদলের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দিকে আমরা নজর রাখছি। সঠিক সময় এলে ভারত সরকার সঠিক পদক্ষেপ নেবে। ভারতের অন্যান্য পত্রপত্রিকাও বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক সংবাদ প্রকাশ করছে। এসব সংবাদ বিশ্লেষণে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। এটা অনুমিতই ছিল। কারণ, ভারত শেখ হাসিনাকে দিয়ে তার যত চাওয়া-পাওয়া ছিল, তার সবই আদায় করে নিয়েছে। শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, ভারতকে যা দিয়েছি, তা সে সারাজীবন মনে রাখবে। এমন নিঃস্বার্থ বন্ধু হারানো ভারতের জন্য বেদনারই বটে! তবে এর প্রতিশোধ ভারত নেবে না, এমন গ্যারান্টি দেয়া যায় না। প্রতিশোধ স্বরূপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অতীতের মতো নানা ধরনের অঘটন ঘটিয়ে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির ধ্বংস করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ধরিয়ে অনিরাপদ পরিস্থতি সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারুণ্যের জোয়ারে উদ্ভাসিত ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান, তা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টা করতে পারে।

জনমনে এ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতে পারে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল জঙ্গি আন্দোলন, ভাঙচুর ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালানো। ষড়যন্ত্রকারিদের এসব শঙ্কামূলক অপকর্ম প্রতিহতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই ম্লান হতে দেয়া যাবে না।

বাংলাদেশ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যকার হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশের মানুষ কখনোই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি, এখনো দিচ্ছে না। গণঅভ্যুত্থানের পরপর কোনো কোনো জায়গায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেয়ার ঘটনা থেকেই আবারও তা প্রমাণিত হয়েছে। দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কেও বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। এদেশের নাগরিক হিসেবে কোনো ধরনের ভয়ভীতিতে না ভুগে তাদের যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা যাতে দেশি-বিদেশি কোনো ধরনের উসকানি বা চক্রান্তে পা না দেয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান, তাতে তারাও শামিল ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত