ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রিয় পুলিশ ফিরে আসুন

আজহার মাহমুদ
প্রিয় পুলিশ ফিরে আসুন

ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি বিজয় অর্জন হয়েছে গত ৫ আগস্ট। এই অর্জনকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এটি আরো আগে হওয়া উচিত ছিলো। তবে এই অর্জনের জন্য অনেক রক্ত যেমন ঝরেছে তেমনি ক্ষতিও হয়েছে অনেক। এই লাভণ্ডক্ষতি নিয়ে আমি বিশ্লেষণ করতে চাই না। কারণ এসব দেশের মানুষের অজানা কিছু নয়। তবে সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে কার্যত দেশ হয়ে গিয়েছিলো অচল। দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশ প্রশাসন কর্মবিরতিতে চলে গিয়েছে। বলা যায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ছিলো। কি একটা অবস্থা একবার ভাবুন! যে পুলিশকে আগে জনগণ ভয় পেতো সেই পুলিশই জনগণের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছে থানা থেকে। এমনও যে হতে পারে সেটা ২০২৪ সালের বাংলাদেশকে না দেখলে বোঝা যাবে না। তবে এটারও প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু যে কোনো কিছুর সীমা থাকাটা খুবই জরুরি। লেবু যেমন অতিরিক্ত চাপলে তেতো হয়ে যায় তেমনি সবকিছুতেউ বাড়াবাড়ি করলে বিপরীতও হয়। পুলিশ জনগণের বন্ধু না শত্রু সেই তর্কেও আমি যেতে চাই না আপাতত। তবে জনগণের পুলিশের প্রয়োজন আছে এটা অস্বীকার করার আর কোনো সুযোগ নেই। এই পুলিশ ছাড়া সাধারণ মানুষ অসহায়।

সেটা এই সময়ে এসে সবাই টের পাচ্ছে। পুলিশের কতিপয় সদস্যের কারণে পুরো পুলিশ প্রশাসন জনগণের কাছে আজ অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো পুলিশ প্রশাসন আজ ভয়ে আছে, আতঙ্কে আছে। এর দায় বিগত সরকারের এবং কতিপয় কর্মকর্তার। তবে এভাবে চলতে পারে না। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে পুলিশের উচিত জনগণের বন্ধু হয়ে আবার একসাথে চলা। জনগণের উচিত তাদের নিরাপত্তা দেয়ার সেই বন্ধুকে স্বাগত জানানো। এই ভয়ভীতি আর আক্রোশের পরিসমাপ্তি ঘটানো উচিত। আজ বাংলার মানুষের বারবার ট্রাফিক পুলিশের কথা মনে পড়ছে। সড়কে যেদিন থেকে ট্রাফিক পুলিশ নেই সেদিন থেকে এই ট্রাফিক পুলিশের অবদান সম্পর্কে সবাই অনুধাবন করতে পারছে। শিক্ষার্থীরা আজ সড়ক পরিচালনা করছে, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। এটা বেশ প্রশংসাও কুড়াচ্ছে সর্বমহলে। তবে ওই যে বলেছিলাম লেবু বেশি চাপলে তেতো হয়ে যায়। তেমনি শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই কাজ আর বেশি পরিচালনা করালে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হবে। লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের এখন সময় ক্লাসে ফিরে যাওয়ার। আমাদের এই শিক্ষার্থীদের কাজটাকে প্রশ্নবিদ্ধ না হতে দেয়ার এটাই সুযোগ। আরো বেশি সড়কে থাকলে প্রশ্ন উঠবে, ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। যার বহিঃপ্রকাশ এরইমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সড়কে এই কয়েকদিন চলাচল করেছেন এমন অর্ধশত যাত্রী এবং ড্রাইভারের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম তাদের সমস্যার কথা। এক রিকশাচালক জানান, তার সারা দিন আয় হয়েছে ১৩১ টাকা। আর কিছু সময় পর তিনি বাড়িতে ফিরে যাবেন। ১০০ টাকা তার মালিকের কাছেই দিতে হবে। বাকি ৩১ টাকা দিয়ে তিনি কি করবেন? এই প্রশ্নটা আমাকেই করেছেন।

আমি উত্তর দিতে পারিনি। তার অভিযোগ ছিলো তিনি যাত্রী নিতে পারেননি, ছাত্ররা তাকে কোথাও দাঁড়াতেই দিচ্ছেন না, খালি রিকশা নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছেন শুধু। আবার একজন ট্যাক্সিচলাক জানান, যেখানে গাড়ি ২ মিনিট আটকে রাখা উচিত সেখানে ছাত্ররা ১০ মিনিটও আটকে রাখেন এবং তাদেরও যাত্রী নিতে দিচ্ছেন না ঠিকমতো। সবচেয়ে বিরক্তিকর অভিযোগ জানিয়েছেন একজন কার চালক। তিনি বলেন, সিটবেল্ট পরেছেন কি না সেটা চেক করার জন্য চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি থেকে একেখান পর্যন্ত তার গাড়ি থামিয়েছেন ১৩ বার। অথচ একবার চেক করলেই হয়ে যেতো, যেহেতু তাদের কোনো সিস্টেম নেই তাই নগরীর প্রতিটি ছোট-বড় স্টপেজেই বারবার থামতে হচ্ছে। এতেও সড়কে জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। এই যখন অবস্থা তখন মনে হচ্ছে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের শিক্ষার্থীদের এই কাজের সুনামের পাশাপাশি দুর্নামও ছড়াবে। অথচ দুর্নাম হওয়ার জন্য এতো কষ্ট করে শিক্ষার্থীরা কড়া রোদে দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের কাজ করছে না। যেহেতু এখানে অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে তাই অবশ্যই এটার প্রভাব পড়বে। এবং এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হবে। তাই এখনই উচিত আমাদের ট্রাফিক পুলিশের ফিরে এসে দায়িত্ব পালন করা। এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের এই সময়টুকুর উপকার দেশের মানুষের হৃদয়ে থাকবে। একইসঙ্গে প্রতিটি থানায় থানায় আমাদের পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে ফিরে আসা জরুরি। আমাদের নিরাপত্তা দেয়া ও আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশের বিকল্প নেই। জনগণের বন্ধু হিসেবে এখনই সময় পুলিশ প্রশাসনের মাঠে নামার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত