ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক

শান্তির বাংলাদেশ গড়ে তুলি
নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়ে শপথ নিয়েছেন গত ৮ আগস্ট রাতে। নতুন সরকারকে দেশ-বিদেশ থেকে অভিনন্দন জানানোর হিড়িক পড়েছে। দেশের শেয়ারবাজার অনেক চাঙ্গা হয়েছে। সবার কামনা ছিল সৎ, নিরপেক্ষ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য লোকদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা। অনেকেই সেই সরকারের সম্ভাব্য ব্যক্তিদের নামের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছিল। তবে নয়া সরকারের প্রধানের বিষয়ে সর্বাধিক আলোচনা হয়েছে। তাতে দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী এবং বর্তমান বিশ্বের অন্যতম খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম সর্বাধিক আলোচিত ও প্রস্তাবিত হয়েছিল। তিনি ইতোপূর্বে ২০০৭ সালের ১/১১-এর সময় গঠিত সরকারের প্রধান হওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু তিনি এবার শিক্ষার্থীদের অনুরোধে সম্মত হয়েছেন। যা-ই হোক, সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা, অতি দ্রুত দেশে নিয়মণ্ডশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, এরইমধে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, ডাকাতি ইত্যাদি অপকর্ম হয়েছে। সমাজের কিছু দুষ্কৃতকারী এসব অপকর্ম করেছে। তাদের সাথে জড়িত হয়েছে পরাজিত শক্তির কিছু লোকও। বিভিন্ন দল এ অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের দমন ও শাস্তি প্রদান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা জরুরি। ড. ইউনূসও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে, সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং ছাত্র ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বিএনপির সমাবেশে ভিডিও বার্তায় বলেছেন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, আসুন শান্তির বাংলাদেশ গড়ে তুলি। যা-ই হোক, নতুন সরকারের কাছে দেশ-বিদেশের মানুষের কামনা, খুব দ্রুত নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন করে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সর্বোপরি, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্থায়ী পথ সৃষ্টি করা। এসব হলেই শিক্ষার্থী-জনতার ব্যাপক ত্যাগ ও মহান বিজয়ের সুফল পাওয়া যাবে। আওয়ামী স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, তাদের অবদানের মূল্যায়ন হবে।

দেশের সংবিধানে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবুও স্বাধীনতা লাভের ৫৩ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তখন সে সংবিধানের দিকনির্দেশনা ভুলে গিয়ে ইচ্ছামতো দেশ শাসন করেছে। ফলে দেশের গণতন্ত্রহীনতা, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সব ধরনের দূষণ, বিচারহীনতা, অর্থ পাচার, আয় বৈষম্য, মাদকের কারবার ও ব্যবহার, বিরোধীদল ও মত দমন, বাকস্বাধীনতা হরণ, জ্বালানি সংকটে শিল্পের উৎপাদনে ধস, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, বেকারত্ব, শিক্ষার মানে ধস ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বহুবার। এসব সদ্য বিদায়কৃত আওয়ামী সরকারের সময়ে বেশি হয়েছে। এই সময়ে দেশ বিশ্বে হাইব্রিড গণতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশ ইত্যাদিতে খ্যাত হয়েছে। দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আর্থিক খাতের। ব্যাংক খাত মূলত খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ কোটি টাকার অধিক বলে সম্প্রতি খবরে প্রকাশ। এর বিরাট অংশ আদায় হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। ফলে বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া, দেশ ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে গত ৭ আগস্ট এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি ঋণ রেখে দেশ থেকে পালিয়েছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে এ ঋণ নেয়া হয়েছে। অথচ, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আওয়ামী লীগের গত দেড় দশকের শাসনামলেই সরকারের ঋণ স্থিতি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বেড়েছে। এই ঋণে তৈরি করা হয়েছে শুধু অবকাঠামো, যার নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক! এই মেগা প্রকল্পগুলোতে মেগা দুর্নীতি হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। অপরদিকে, বেসরকারি খাতের ঋণও রয়েছে অনেক। সব মিলে দেশের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট জিডিপির ৬৫ শতাংশ বলে পণ্ডিতদের অভিমত। অন্যদিকে, বর্তমানে বিদেশি ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে নতুন করে ঋণ করতে হচ্ছে। সে অবস্থায় আগামীতে বর্ধিত কিস্তি ও সুদ পরিশোধ হবে কীভাবে তা ভাববার বিষয়। স্মরণীয় যে, সরকারি তথ্য মতে, ২০২৯-৩০ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের কিস্তি ও সুদ বাবদ ৫১৫ কোটি ডলার শোধ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্থায়ী পথ সৃষ্টি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য এ কাজটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজটির যাত্রা শুরু করা সহজ। তাই সেটা করতে হবে। অর্থাৎ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার কমিশন ও স্থানীয় সরকারকে পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বমুক্ত করার আইনগত ব্যবস্থা করতে হবে অতি দ্রুত। সেটা হলেই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্থায়ী পথ সৃষ্টি হবে। একবার শুরু হয়ে গেলে সে পথ আর কেউ রুদ্ধ করতে পারবে না। কেউ চেষ্টা করলেও মানুষ তা প্রতিহত করবে। নতুন সরকারের কাছে গণমানুষের আরো আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনা। বিশেষ করে, খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানো। সারা দেশে খাদ্য মজুদবিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং সার্বক্ষণিক বাজার মনিটর করে ভেজাল, মজুতদার ও অধিক মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হলেই খাদ্যপণ্যের মূল্য অনেক কমে স্বাভাবিক হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। এছাড়া, দুর্নীতি অপচয়, অউৎপাদনশীল ও বিলাসী ব্যয় বন্ধ এবং জ্বালানি সংকট দূর করার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত