ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হযবরল অবস্থা

মো. তাহমিদ রহমান, লেখক: প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হযবরল অবস্থা

কোটা আন্দোলন-পরবর্তী গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন। আন্তঃবাহিনীর সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ ৬ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ত্ব অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে এরই মধ্যে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। গত ৮ আগস্ট জাতীয় সরকারের উপদেষ্টারা শপথও নিয়েছেন। গত রোববার (১১ আগস্ট) এ সরকারের প্রথম কার্যদিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ক্লাসের বিষয়ে একই অবস্থা ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরেও। যদিও স্কুল-কলেজগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে নির্দেশনা আসে মাউশি থেকে। কিন্তু এ বিষয়ে মাউশি এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি। গত শুক্রবার ৯ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মিটিং শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সহসাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের কথা তিনি বলেননি। ফলশ্রুতিতে ৬ তারিখে আইএসপিআর কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হলেও ১১ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না বন্ধ থাকবে এ নিয়ে দ্বিধায় পড়েন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্লাস চালু রাখে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী কর্মবিরতি ঘোষণা করায় দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা সারা দেশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছে। এরূপ অবস্থায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে রাস্তায় রেখে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন নয় কি? দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যখন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে না খুলে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে পরিশুদ্ধ করে দেশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ একটি নির্দিষ্ট দিনে খুলে দিতে হবে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির তত্ত্বাবধানে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় এসব কমিটিতে তাদের নেতাকর্মীদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মীরাও লাপাত্তা হয়ে যান। ফলশ্রুতিতে বেশিরভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষক কর্মচারীদের জুলাই-২০২৪ এর বেতন উত্তোলনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এসব কমিটির কারণে নানাবিধ সমস্যার উদ্রেক ঘটায়। এক সময় বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন ভাতা পেতেন না। পরবর্তীতে এমপিও প্রথা চালুর মাধ্যমে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন ভাতা পাওয়া শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার শর্তে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাস হতে সরকারি কোষাগার থেকে মূল বেতন স্কেলের শতভাগ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমাদান ব্যতিরেকেই শতভাগ বেতন-ভাতা দেয়া শুরু হয়। সরকার যখন বেতন-ভাতা দিতো না তখন শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা কমিটির বিধান করা হয়েছিল। এখন যেহেতু বেতন-ভাতাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সব ধরনের খরচই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরকার বহন করে তাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এই ধরনের ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের সমান হারে মূল বেতনের শতভাগ পেলেও উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান আছে। শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি শিক্ষক সমাজের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, শতভাগ ইদ বোনাস এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলির নীতিমালা ২০২৪ পরিবর্তন করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দীপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।

লেখক: প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত