দুষ্কৃতকারীদের অন্তর্ঘাতী তৎপরতা

শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করুন

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন সেখানে বসেই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও অপতৎপরতায় লিপ্ত। কীভাবে দেশে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানো যায় সেই চেষ্টায় ব্যস্ত সাবেক এই স্বৈরাচার। দেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে বিদেশে বসে অব্যাহতভাবে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘দিল্লিতে বসে হাসিনার বিবৃতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অন্তরায়।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গত বুধবার এই বার্তা দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে এটিই সরকারের অবস্থান।

এদিকে দীর্ঘ ১৫ বছরে স্বৈরাচারী হাসিনার গড়ে তোলা প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাও দেশের ভেতরে অপতৎপরতায় লিপ্ত। তারা এখনো প্রশাসনে বহাল তবিয়তে থাকায় অপতৎপরতা চালিয়ে যেতে পারছেন। এসব কর্মকর্তা, বিশেষ করে হাসিনার অনুগত কিছু জেলা প্রশাসক ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর জেলায় জেলায় অস্থিরতা তৈরিতে মদদ দিচ্ছেন। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্তত ৩০ জন জেলা প্রশাসক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত। তারা অস্থিরতা তৈরিতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে মদদ দিচ্ছেন।

হাসিনার শাসনামলে জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রধান যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ। ছাত্রজীবনে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ কয়েক স্তরে তদন্ত করা হতো। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় সূত্রে যাচাই-বাছাই করা হতো। তারপর জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হতো।

শুধু প্রশাসন নয়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা উঠেপড়ে লেগেছে। তার আলামত স্পষ্ট। খোদ রাজধানী ঢাকায় এদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা অপকৌশলে এক মাদ্রাসাছাত্রসহ ওই তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহতদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হলেও সে অভিযোগ কে দিয়েছে বা কাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সেটা কেউ বলতে পারে না।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেমন মানুষ হত্যায় মেতেছিলেন, তার দলীয় নেতাকর্মীরাও একই মানসিকতা পোষণ করেন। গণঅভ্যুত্থানের পর তারা বিভিন্ন জায়গায় চোরাগোপ্তা মানুষ খুন করছেন। রাজধানীর ওয়ারীতে আগাম ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতাসহ দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ওয়ার্ড কমিশনারের লোকজনের বিরুদ্ধে।

উল্লিখিত তিনটি ঘটনা আসলে দেশের খণ্ডচিত্র। প্রকৃত বাস্তবতা বা অবস্থা আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সরকার পতনের পর আত্মগোপনে গেলেও ঘাপটি মেরে বসে আছে। এসব বিষধর সাপ সুযোগ পেলেই আবার ছোবল মারবে; তারা যেকোনো উপায়ে ছাত্র-জনতার এই ঐতিহাসিক অর্জন ব্যর্থ করতে চায়। আমরা আশা করব, দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের শক্ত হাতে দমন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।