জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে

জালাল উদ্দিন ওমর

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দেশের রাজধানী আর চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এই দুটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক শহর। আয়তন, জনসংখ্যা, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিমানবন্দর, ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা, সড়ক-মহাসড়ক, ফ্লাইওভার এবং বড় বড় বিপণি বিতানসহ সব ধরনের অবকাঠামো বিবেচনায় ঢাকা দেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং এর পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং উন্নত জীবনযাপনের আধুনিক যত সুযোগ-সুবিধা তা এই দুটি শহরেই সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান। দুটি শহরেই গড়ে উঠেছে অসংখ্যা দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা এবং আবাসিক এলাকা। নাগরিক সুবিধা প্রদান এবং তা বৃদ্ধির জন্য শহর দুটিতেই সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। ঢাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে রাজউক আর চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে সিডিএ। অথচ, জলাবদ্ধতা এখনো শহর দুটির অন্যতম প্রধান সমস্যা। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার এ দুটি শহরে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও এখনো সমস্যা থেকে মুক্ত হয়নি। একটু বেশি বৃষ্টিপাত হলেই শহর দুটির অনেক রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যায়। রাস্তায় জমে থাকে হাঁটু সমান পানি। রাস্তার পাশে বিদ্যমান দোকানপাটে এবং অনেক বসত বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে যায়। এসব পানি আবার ময়লাযুক্ত এবং নোংরা। পানির পাম্প এবং মোটর পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। বাড়ির নিচতলায় বিশুদ্ধ পানির টাংকিতে ময়লা পানি ঢুকে তা খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়। রাস্তায় পানি জমার কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে নাগরিক জীবনে এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণা নেমে আসে। জলাবদ্ধতা নিরসনের তাই শহর দুটিতে আধুনিক ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। পানি ছাড়া জীবন চলে না। তাই পানির অপর নাম জীবন। যেখানেই পানি, সেখানে জীবনের সৃষ্টি। যেখানে জীবন সেখানেই পানির ব্যবহার। আর জলাবদ্ধতা মানে হচ্ছে রাস্তাঘাটে, মাঠে ময়দানে পানি জমে থাকা। রাস্তাঘাটে পানি জমে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, বিপণি বিতান, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি স্থাপনায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি ব্যবহার হয়। মোটকথা, সেখানে মানুষের বসবাস এবং অবস্থান, সেখানেই পানির ব্যবহার। বাথরুমে, গোসলে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়, রান্নাঘরে প্রতিদিন প্রচুর পানি ব্যবহার হয়। এই ব্যবহৃত পানি বিল্ডিং থেকে পাইপ দিয়ে প্রথমে বিল্ডিংয়ের পাশে অবস্থিত ড্রেনে যায়, তারপর ড্রেন থেকে খালে যায়, খাল থেকে নদীতে যায় এবং নদী হতে সাগরে যায়। একইভাবে শহরের প্রতিটির এলাকার বৃষ্টির পানিও ড্রেন হয়ে খালে, খাল হয়ে নদী এবং নদী হয়ে সাগরে যায়। রাস্তার ওপর যে বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টির পানিও প্রথমে রাস্তার দুপাশে অবস্থিত ড্রেনে যায়, তারপর ড্রেন থেকে খালে, খাল থেকে নদীতে এবং নদী থেকে সাগরে যায়। এই পানিই আবার পানি চক্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে খাল-নদী-সাগর-মহাসাগর হতে বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে যায়, তা আবার মেঘ হয়ে বৃষ্টি হয়ে ভূপৃষ্টে পড়ে। স্বাভাবিক সময়ে মানুষের নিত্য ব্যবহৃত পানি ড্রেন হয়ে খালে-নদীতে চলে যায় এবং সেক্ষেত্রে রাস্তাঘাটে কোনো জলাবদ্ধতা থাকে না। কারণ, মানুষের ব্যবহৃত এই পানির পরিমাণ প্রায় নির্দিষ্ট থাকে এবং এই পানি বহন করে নিতে ড্রেনসমূহ সক্ষম। কিন্তু বর্ষাকাল অথবা অন্য যে কোনো সময়ে বেশি বৃষ্টি হলে, তখন সেই বৃষ্টির পানি বহন করে নেয়ার মতো ক্ষমতা ড্রেনসমূহের থাকে না। কারণ, এই সময় হঠাৎ করে অনেক পানি ভূপৃষ্টে পতিত হয়, ফলে ড্রেনের ওপর হঠাৎ করে বিরাট একটি চাপের সৃষ্টি হয়। এই পানি দ্রুত সময়ে ড্রেন হয়ে খালে-নদীতে চলে যেতে পারে না এবং তখনই পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই পৃথিবীতে বিদ্যমান খাল-নদী-সাগর-মহাসগর সবই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এবং এসবই পানির ধারক-বাহক। এর প্রত্যেকটিই একে অপরের সাথে যুক্ত। এক দেশের পানি এসবের মধ্য দিয়েই চলে যায় অন্য দেশে আবার অন্য দেশের পানি চলে আসে অন্যকোনো দেশে। তাই পানির কোনো দেশ পরিচিতি নেই। শহুরে জীবনে প্রতিদিনের ব্যবহৃত পানি এবং বৃষ্টির সময়ে বৃষ্টির পানি এসব খাল-নদী-সাগর-মহাসাগরে চলে যাবার জন্য আমরা প্রতিটি এলাকায় এবং রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করেছি। এসব ড্রেনের প্রত্যেকটি আবার একে অপরের সাথে যুক্ত। এসব ড্রেনের পাশাপাশি আমরা আবার অনেক নালা ও নির্মাণ করেছি।

লেখক: প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক