ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যবসায়-বাণিজ্যে গতি আনা দরকার

স্থবিরতা চলছে
ব্যবসায়-বাণিজ্যে গতি আনা দরকার

দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্থবিরতা চলছে। কিছু গণমাধ্যমে এমন তথ্য দিয়ে এজন্য দায়ী করা হচ্ছে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনকে। কিছু ব্যবসায়ী শিল্পপতি বলার চেষ্টা করছেন, ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কারফিউ জারি ও সহিংস ঘটনার জেরে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। কথাটি অপকৌশলে পতিত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের লুটপাট, দুঃশাসন ও সন্ত্রাসের রাজত্বের বাস্তবতা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী শিল্পপতি দুঃশাসনের সহযোগী হিসেবে যাবতীয় অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন, সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন এবং সব রকমভাবে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন। সেসব মানুষ ভুলে যায়নি।

আসলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর সেই পুরোনো প্রবণতা আমাদের জাতিগত স্বভাব। নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ব্যাংক খাত পুরোপুরি ধসিয়ে দেয়া, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে অর্থনীতির ভীত ধ্বংস করা, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বন্ধ রেখে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে গ্যাস আমদানি, বিদেশি কোম্পানির সাথে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিতে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি এবং পুঁজিবাজারে উপর্যুপরি কারসাজির মাধ্যমে যেভাবে অর্থ লোপাট করা হয়েছে তার পরিণতিতে মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে অর্থনীতির। তলানিতে এসে ঠেকেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে এক বছরেরও বেশি সময় আগে। বন্ধ হয়ে যায় অসংখ্য কলকারখানা। বেকার হয়ে পড়ে বন্ধ কারখানার শ্রমিক ও দুস্থ হয়ে পড়া শিল্পকারখানা থেকে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা।

সরকারি হিসাবে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে দেশের শিল্পোৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে আসে, যা করোনা মহামারির পর সর্বনিম্ন। বছরের শুরু থেকে রফতানি আয় ক্রমাগত কমেছে। গত জুলাইয়েও রেমিট্যান্স কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি উৎস রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স- দুটিই কমেছে। রিজার্ভ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর দায়ও কি ছাত্র আন্দোলনের?

গত সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিক লুটপাটে নাজুক হয়ে পড়া ব্যাংক খাত শিল্প স্থাপনে ঋণ দেয়া দূরের কথা, নিত্যপণ্য আমদানির এলসি খুলতে ডলার সরবরাহেরও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ও এর দোসরদের এসব কর্মকাণ্ডের কোনো প্রতিবাদ ব্যবসায়ীরা করেননি। কেউ বলার চেষ্টা করছেন, ভয়ে বা বাকস্বাধীনতা না থাকায় তারা কথা বলতে পারেননি। এমন কথা সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয়; বরং স্বৈরাচারের সাথে স্বার্থের সম্পর্ক ব্যবসায়ীদের চুপ থাকার কারণ। তারা ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হয়েছেন, লুটপাটে অংশ নিয়েছেন, সিন্ডিকেট করে জনগণের অর্থ লোপাট করেছেন। আসলে এসবের বিনিময়ে তারা মুখ বন্ধ রাখার নীতি গ্রহণ করেন। এটি সবার কাছে পরিষ্কার। এর জ্বলন্ত প্রমাণও তারা রেখেছেন।

বাস্তবতার আরেক দিক এটাও যে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্থবিরতা আছে। সেটি কাটাতে হবে। শিল্পকারখানা চালু করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সচেতন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সরকার কাজ করবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে, সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। এ দুটি জায়গা ঠিক রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নতি দেখা যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে যদি ব্যবসায়ীরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। তাদের অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ করে নীতি-নৈতিকতা ও আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসায় করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত