চতুর্থ শিল্পবিপ্লব : আমরা কতটা প্রস্তুত?

মো. তাহমিদ রহমান, লেখক: প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। যার প্রভাবে সমাজ তথা রাষ্ট্র জীবনে ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সাধারণত বিপ্লব বলতে আমরা বুঝি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমূল-পরিবর্তন সাধন হওয়া। আমাদের জেনারেশন জুমারসরা এরইমধ্যে সেই পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলেছে। মানব সভ্যতা মূলত শুরুই হয়েছে বিপ্লবের মাধ্যমে। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানবজাতি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কতোটা ভালোভাবে বেঁচে থাকা যায়। সেই লক্ষ্য থেকেই কায়িক শ্রমনির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ নির্মাণ করেছিল পিরামিড, চীনের মহাপ্রাচীর, হায়া সোফিয়া, মাচুপিচু, স্টোনহেঞ্জ, চিচেন ইৎজার মতো স্থাপত্য। সময়ের পরিক্রমায় অন্ধকার যুগ কাটিয়ে আলোকোজ্জ্বল আধুনিক বিশ্বের উন্মেষ ঘটাতে পৃথিবীতে ধাপে ধাপে সংঘটিত হয়েছে কয়েকটি শিল্প বিপ্লবের। যেহেতু যে কোনো বিপ্লবেই সমাজব্যবস্থায় একটি আমূল-পরিবর্তন ঘটে যায়, শিল্প বিপ্লবও সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। আজকে থেকে প্রায় ২৪০ বছর পূর্বে ১৭৮৪ সালে পানি ও বাষ্পীয় ইঞ্জিনের নানামুখী ব্যবহারের কৌশল আবিষ্কারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল প্রথম শিল্প বিপ্লব।

সমাজব্যবস্থায় শিল্পের প্রভাবে ব্যাপক অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটায় ইংরেজ অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টয়নবি অর্থনৈতিক উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন তথা শিল্প বিপ্লব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল-পরিবর্তন ঘটলেও চীন ও ভারতের মতো অ-শিল্পায়িত অঞ্চলে তখনো বিপ্লবের ছোঁয়া লাগেনি। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মাধ্যমে শিল্প জগতে উৎপাদন ব্যবস্থা নতুন গতিপথ লাভ করে।

কায়িকশ্রমের জায়গা দখল করে নেয় বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি। উৎপাদন ব্যবস্থার এই নতুন গতি পরিবর্তন দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব নামে পরিচিত। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্ববাসী এক নতুন দিগন্তের সন্ধান লাভ করে। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে শিল্পের দ্বিতীয় বিপ্লব মূলত পৃথিবীর সব আবিষ্কারের সূতিকাগার। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের পর মানবজীবনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসে। ইউরোপ-আমেরিকা যখন দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে জীবন ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তখন চীন ও ভারতের ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষ প্রথম শিল্প বিপ্লবের স্পর্শ লাভ করে। বিশ্ব রাজনৈতিক মেরুকরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কম্পিউটার প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, মাইক্রোচিপ, বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি, আনবিক শক্তি সহ অন্যান্য উদ্ভাবন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের পালে নতুন হাওয়া লাগে। ইন্টারনেট সারা বিশ্বকে একসূত্রে গেঁথে ফেলে। পুরো বিশ্বকে নিয়ে আসে হাতের মুঠোয়। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধিত হয়। ইন্টারনেটের কারণে সমগ্র বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজে পরিনত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজ হয়ে গেছে, উৎপাদন বেড়ে গেছে বহুগুণ ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি মেটানো সম্ভব হয়েছে। কম্পিউটার এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবাদান সম্ভব হচ্ছে। ১৯৬৯ সাল থেকেই বিশ্বের অনেক দেশে এই বিপ্লবের সূচনা হলেও বাংলাদেশ পর্যন্ত তা পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়।

মানুষের মেধা, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বার গোড়ায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের এই ধারণাটি ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল জার্মানিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়। জার্মান সরকারের গৃহিত উদ্যোগের কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় কম্পিউটারের সার্বিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। ফলে উৎপাদন বেড়ে যায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসে আমূল পরিবর্তন। এ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় পরে যায়। পরবর্তীতে সেটি নিয়ে আলোচনার জন্য সারা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতা, বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ ও বিশ্লেষকরা এক জায়গায় হয়েছিলেন ২০১৬ সালের ২৩ জুন সুইজারল্যান্ডের শহর দাভোসে। সেখানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে ধারণা দেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ সোয়াব ক্লাউস। আগের তিনটি শিল্প বিপ্লবে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করত কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় যন্ত্র নিজেই নিজেকে পরিচালনা করছে। এর কারণেই বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগৎ একাকার হয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, রোবটিকস, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, মাইক্রোপ্রসেসর, থ্রিডি প্রিন্টিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব পিউপল, ইন্টারনেট অব থিংস, ডিজিটাল কনসেনসাস, পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস টেকনোলজি, মেকাট্রনিক্স, সেল্ফ ড্রাইভ ভিকেইল ইত্যাদি হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আনুষঙ্গিক প্রযুক্তি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে অটোমেশন ব্যাপকতা লাভ করছে। ইন্ড্রাষ্ট্রি গুলো পণ্য উৎপাদনে রোবট ব্যবহার করায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমে যাচ্ছে এবং পণ্যের গুণগত মান নিখুঁত হচ্ছে।

বৈশ্বিক আমদানি রপ্তানি পক্রিয়া সহজতর হচ্ছে। মানব জীবন বেশি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পরছে। ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে আমাদের দেশেও ই-কমার্স, ই-ব্যাকিং, ই-মিউটেশন, ই-পেপার, ই-লার্নিং, আউটসোর্সিং সুবিধার ব্যবস্থা থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সচেতনতামূলক উদ্যোগের অভাব, মূলধনের অভাব, অবকাঠামোগত স্বল্পতা, দক্ষ মানবশক্তির অভাবে তা যথাযথভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ৫জি ইন্টারনেট সেবা। বিশ্বের অনেক দেশে এ গতির ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও বাংলাদেশে এখনো এই সুবিধা চালু হয়নি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মোকাবেলা করতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, চীন তাদের শিক্ষার পাঠ্যক্রমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করে সিলেবাস প্রণীত হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি সিলেবাস ভুক্ত হলেও তা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে ধারণ করার উপযোগী নয়। মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে এ জাতীয় বিষয় নেই বললেই চলে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সমগ্র পৃথিবীতে একটি অকল্পনীয় স্মার্ট সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবে। ফলে বিশ্বের কায়িক শ্রমবাজার সংকুচিত হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিতে হলে বাংলাদেশকেও অতিদ্রুত মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করে সেগুলো পরিচালনা করার জন্য যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগ দিতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধাকে কাজে লাগাতে হলে দেশের জনসংখ্যাকে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। এদেশে মেধাবী, দক্ষ ও সম্ভাবনাময় তরুণ আছে। তাদের মেধা, দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন যুগোপযোগী গুনগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের।

দেশের মানুষের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনাতেও এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আমরা চাই রাষ্ট্রের এই পরিবর্তন ধারা অব্যাহত থাকুক। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন এনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী, মানবিক, মেধাসম্পন্ন, দেশপ্রেমিক জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য একটি আধুনিক শিক্ষাক্রম প্রনয়ণ হোক। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজব্যবস্থা এবং স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। স্মার্ট তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন মনুষ্যত্ব, সমতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ এক শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা।

তরুণ প্রজন্মকে স্মার্ট শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান সমৃদ্ধ পাঠ্যক্রম প্রনয়নের পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ল্যাব গুলোর যথাযথ সংস্কার করা প্রয়োজন। শিক্ষকদেরকে রোবটিক্সের উপর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে জরুরি ভিত্তিতে বেতন-ভাতা’র বৈষম্য দূর করা। ইএফটি পাইলট প্রকল্পকে সার্বজনীনভাবে বাস্তবায়ন করা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসার পদগুলোতে শিক্ষকদের মধ্য থেকে যথাযথ পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা। এসব পদে শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রদান হলে মাঠ পর্যায়ে পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁর বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির উপর দায়িত্বভার অর্পিত হওয়ায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিজ্ঞান বিষয়ক সকল ব্যবহারিক ক্লাসকে হাতেকলমে শেখানোর জন্য যথাযথ মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেইসাথে প্রযুক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে নজরদারি কিংবা অংশীজনদের সাথে মানিয়ে নেয়ার অনীহার প্রবনতা কমাতে হবে। স্মার্ট আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং ডাটা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিল্পক্ষেত্রে উন্মোচিত এই দিগন্তের ছোঁয়া শিল্পের পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষি ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে ডিজিটালাইজড করে শিক্ষিত বেকার যুবসমাজকে মানবসম্পদে পরিণত করতে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের হাইটেক পার্কগুলোকে বাস্তবিক অর্থে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের কাজে পরিচালনা করতে হবে। ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবদানে ২০৩০সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারে। প্রবৃদ্ধির হার হবে ১.২ শতাংশ। সারা বিশ্বে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৭.২ মিলিয়ন। ভৌগোলিক সীমারেখা কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পরবে। পৃথিবী জুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে ১০ মিলিয়ন। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। একটি রাষ্ট্র উন্নত হয় শিক্ষিত ও দক্ষ জনবল দ্বারা। দেশের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন শুধু প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মের ইতিবাচক মনোভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, মাইক্রোপ্রসেসরের ডিজাইন সহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চালিকা শক্তি গুলোকে জনপ্রিয় করার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রাষ্ট্রযন্ত্রের অগ্রাধিকারমূলক কাজ হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে পরিচিত করে তোলার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভলাপিং, আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রাষ্ট্রের বিশাল শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে দক্ষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ নিয়ে আমরা সহজেই নতুন ধারার বাংলাদেশে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটাতে পারি।