ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক দখল : সেকাল-একাল

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, লেখক- গবেষক, কলামিস্ট, মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১, মোবা : ০১৯৬৩৬৭১৯১৭
ব্যাংক দখল : সেকাল-একাল

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। পরে রাষ্ট্রীয় মদদে কৌশল বদল করে ব্যাংক দখল করেছিলেন এস আলম ও তার সঙ্গীরা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক দখলের ফলে পুরো ব্যাংক খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ব্যাংক দখলের আখতারুজ্জামান বাবু বনাম এস আলম পদ্ধতিব্যাংক কীভাবে দখল করতে হয়, সেটা প্রথমে শিখিয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই সাবেক শিল্প ও সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তিনি অস্ত্রের মুখে বেসরকারি খাতের ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করেছিলেন। তখন আহমেদ চৌধুরী। দুজনেরই রাজনীতির জায়গা ছিল চট্টগ্রাম। এই দখলের সঙ্গে সরকার বদলের কোনো বিষয় ছিল না, বরং অস্ত্রের জোরে নিজের আধিপত্য বজায় রাখাই ছিল উদ্দেশ্য। ঘটনাটি ছিল ১৯৯৯ সালের ২৬ আগস্ট। মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলার পরে ঘটনার বিবরণ দিয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। সেখানে বলা ছিল, ‘ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত রোববার নির্ধারিত বোর্ড মিটিং ছিল। বোর্ড মিটিং চলাকালে আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় আখতারুজ্জামান বাবু ও তার ছেলে জাভেদসহ ৫০-৬০ জনের অস্ত্রধারী ক্যাডার বোর্ডরুমে অতর্কিতভাবে হামলা চালান, পরিচালকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর করেন এবং মারমুখী অবস্থায় জোরপূর্বক প্রত্যেক পরিচালকের কাছ থেকে টাইপ করা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করেন, পরিচালকদের পদত্যাগে বাধ্য করেন। অস্ত্রধারীরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ চৌধুরীকে নির্মমভাবে প্রহার ও বিবস্ত্র করে ফেলেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাটি জানানো হলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ পরিচালকদের বোর্ডরুম থেকে বের করার ব্যবস্থা নেয়, তা না হলে উপস্থিত পরিচালকরা কোনোভাবেই ঘটনাস্থল থেকে বের হতে পারতেন না।’ ব্যাংকের শেয়ারধারী হলেও আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন ২২০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। এ নিয়ে মামলা করার পরেই হামলার ঘটনা ঘটেছিল। দখল করে তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর একই দিনে জাফর আহমেদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, হামলাকারীর দলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পুত্র জাভেদ (পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমি প্রতিমন্ত্রী, যার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে) ছাড়াও ছিলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের কাদেরীয়া বাহিনীর কাদের, নাসিরাবাদের ছিঁড়া আকবর ও বাঁশখালীর খুরশীদ। পুরোনো আরেকটি ঘটনার কথা এখানে বলা প্রয়োজন। ১৯৯৩ সালের ৮ এপ্রিল ইউসিবিএলেরই পরিচালক হুমায়ুন জহিরকে ধানমন্ডির বাসায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। বলা হয় ব্যাংক পরিচালকদের মধ্যে বিরোধের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় আখতারুজ্জামান বাবুকে দায়ী করে মামলা ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন পেয়ে পরে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান, ফিরে আসেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে। তারপরই ব্যাংক দখলের এ ঘটনা। জাফর আহমেদ চৌধুরী ও আখতারুজ্জামান বাবু- দুজনই দলের সদস্য হওয়ায় বিপাকে পড়ে গিয়েছিল সে সময়কার আওয়ামী লীগ সরকার। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া পর দিন মন্তব্য করেছিলেন, ‘ইউসিবিএল ঘটনার দুটি দিক আছে। একটি অর্থনৈতিক, যা বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। অন্যটি রাজনৈতিক, যা প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত