ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে

মাঙ্কিপক্স
এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে

কয়েক বছর আগে করোনাভাইরাস যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সেই রেশ এখনো কাটেনি। বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা শুধু নয়, বিশ্ব অর্থনীতিকেও দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল করোনাভাইরাস। এবার বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স। গত ১৮ আগস্ট আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাঙ্কিপক্স রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্দরের আগমনী চ্যানেলে সার্বক্ষণিক একটি চিকিৎসক দল নিয়োজিত রয়েছে। মাঙ্কিপক্স বিষয়ে এয়ারলাইন্সগুলোকেও সতর্ক থাকার পাশাপাশি মাঙ্কিপক্স লক্ষণযুক্ত কোনো যাত্রী থাকলে দ্রুত স্বাস্থ্য বিভাগকে জানাতে এবং কোনো যাত্রী দেশে আসার ২১ দিনের মধ্যে তাদের শরীরের মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা দিলে ১০৬৫৫ নম্বরে কল করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

দেশে সাধারণের ভেতরে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবের কথা অজানা নয়। আমাদের স্মরণে আছে, করোনা দুর্যোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিপর্যায়ে অসচেতনতা কীভাবে সংকট বাড়িয়েছিল। আজকে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্য নয়, ভেঙে পড়তে পারে দেশের সার্বিক অর্থনীতিও। বিশ্ববাজারে পণ্য উৎপাদন ও জোগানের শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত হতে পারে সে অভিজ্ঞতা দিয়েছিল করোনাভাইরাস। করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দার রেশ লক্ষ্য করা গেছে তাতে এখনই সতর্ক না হলে মাঙ্কিপক্সও বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর এ ক্ষতি শুধু নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকবে এমন ভাবার সুযোগ নেই। বিশ্বায়নের যুগে প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে তার প্রভাব নিজের ঘরেও পড়ে। তাই দেশকে মাঙ্কিপক্সের প্রকোপ থেকে মুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মাঙ্কিপক্সের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে বৈশ্বিকভাবে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে। আমাদের স্মরণে আছে, করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতেও। বিশ্বব্যাপী বিঘ্নিত হয়েছিল স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি। বৈশ্বিক যোগাযোগ ও পর্যটন শিল্পেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। আমরা চাই না, মাঙ্কিপক্সের প্রকোপে আবার নতুন করে অর্থনৈতিক গতিধারা বাধাগ্রস্ত হোক। করোনা প্রকোপের সময় আমাদের অনেকের অসচেতনতা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে দায়িত্বহীনতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এবারে দেখা দেয়া মাঙ্কিপক্সও করোনার মতোই ছোঁয়াচে। এই ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। তাই আক্রান্তের সংখ্যা দিয়ে বা দেশে এখনো কারো শরীরে মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, এমন হালকা কথার মাধ্যমে অসচেতনতা না ছড়িয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে যারা এখন দেশে আসবেন, তাদেরও নিজেদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় একজন আক্রান্ত থেকেও খুব দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজন সবার একনিষ্ঠ প্রয়াস। এরইমধ্যে একটি ভয়ের পরিবেশ বিশ্বজুড়ে তৈরি হতে শুরু করেছে, বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্স বিস্তারের ব্যাপারে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে বলেছে, মাঙ্কিপক্স সংক্রামক রোগ। এর উপসর্গ অনেকটা জ্বর বা ফ্লুর মতো। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস থেকেও অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে। বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর ও সীমান্ত চেকপোস্টগুলোতেও নেয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

আমাদের প্রত্যাশা বিজ্ঞানসম্মতভাবে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার আলোকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুতি নেবে। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারের নানা মহল থেকে সচেতনতামূলক যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা সম্মিলিতভাবে অনুসরণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আতঙ্ক ছড়ানো নয়, এখন প্রয়োজন সচেতনতা। আর সচেতনতাই পারে সব দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দিতে। এক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স মোকাবিলায় সরকারকে অবশ্যই পরীক্ষা ও মাঙ্কিপক্সের আচরণবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিশেষ করে মাস্ক পরা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়েও প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা কারো অসচেতনতায় যেন ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর যেন তা প্রভাব না ফেলে সেদিকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সজাগ থাকা জরুরি। সেই সঙ্গে শুধু নিজে ভাইরাস প্রতিরোধ করলেই হবে না, অন্যদেরও প্রতিরোধের সুব্যবস্থা করে দিতে হবে। সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত