নারীর নিরাপত্তা চাইছি মিলছে কই?

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নারীত্বের জীবনকে মৌমিতা বোধহয় চরমভাবে ঘৃণা করেই গেল। যে ফিমেইল কলিগ তার বাঁহাত চেপে ধরেছিল তার সঙ্গে কি একবারও চোখাচোখি হয়নি? আঠারোটা হায়েনা আঠার মত যে শরীরটা ছেনে দিয়েছে, দাঁতের পর দাঁত বসিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে শরীর- তাদেরকে পুরুষের জাত ভাবতে লজ্জা হচ্ছে। একজন মানুষের গলা কতক্ষণ চেপে ধরলে চোখির মণি দিয়ে রক্ত বেরুতে পারে- একবার কল্পনা করতে পারেন? চোখ বন্ধ করে ত্রিশ সেকেন্ড ভাবুন। মানুষের বাচ্চা এমন অমানুষ কী করে হয়ে ওঠে- সেই ভাবনা বোধহয় মানব জনমে সমাধান খুঁজে পাবে না। মস্তিষ্ক বিকৃতির কোন পর্যায়ে মানুষ সমস্ত জুড়ে অমানুষ হয়ে উঠতে পারে- তা ভাবনায় নিতেই ঘৃণায় কুঁজো হয়ে যাচ্ছি। ডা. মৌমিতার জীবন নরপিশাচদের মানসিক বিকৃত ক্ষুধার সর্বশেষ কামড় নয়- এটা সমাজ দেখেই বুঝতে পারি! নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ সমাজ আমাদেরকে কাঁদায়, ভাবায় এবং প্রতিবাদী করে; তবুও শুদ্ধ হয় না। জাপানের মেগুমি- তাও ভিনদেশী সেনাদের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছিল, বাংলাদেশের তনুর ধর্ষণে স্বদেশি দানব ছিল কিন্তু ভারতীয় অভাগা মৌমিতার হন্তারকে তার নারী সহকর্মীর সহায়তায় বর্বরতার অন্ধকার দিগন্ত আরও গভীর হয়ে প্রকাশ করেছে। নারীর ভাগ্য ভৌগোলিক সীমানার এপার-ওপারে চিত্র বদলায়নি! মানুষের এই অধঃপতিত সমাজে মৌমিতারা চিরকালই বিকৃত ক্ষুধার বলি হয়েছে।

যে সমাজ নারীর নিরাপত্তায় নিজেরা ঢাল হতে পারেনি সে সমাজে শিক্ষা-সংস্কৃতি কিংবা মনুষ্যত্ব ব্যর্থতার রসদ যুগিয়েছে মাত্র। মানুষ কী করে এমন অমানুষ হতে পারে, পুরুষ কীভাবে এমন বর্বর-নরাধম হতে পারে- এ প্রশ্নের সদুত্তর ধর্ষকের পৃষ্ঠপোষক সমাজের কাছ থেকে কখনোই মিলবে না। ভালোবেসেছে পুরুষ, মমতা দিয়েছে নারী- তবুও যে সকল দুর্ঘটনা ঘটছে তা অধোঃগতিত সমাজের দৃশ্যপট দেখিয়ে নারীর নাজুক সুরক্ষার সাক্ষী দিচ্ছে। কতোখানি ঘৃণা মৌমিতারা এই সমাজের জন্য জমা করেছে তা যদি সমাজ চোখে দেখতে পারতো তবে আত্মহত্যা করতো। উপলব্ধি করলে নিজেই নিজের হন্তারক হতো। পুরুষ মানুষ হয়ে উঠলে, নারী- নারীর সবান্ধব হলে তবেই এই সমাজ নারীর নিরাপত্তার চাদরে মুড়বে। তেমন সমাজ প্রত্যাশা করি যেখানে নারীর নিরাপত্তা সিন্দুকে রক্ষতি সম্পদের মত সুরক্ষায় থাকবে। মানুষের থেকে এমন ভাবনা চাই যেখানে কামনা উদ্রেকের আগে বিবেক বেরিকেড দেবে। পুরুষে থেকে সেই সহযোগিতা কাম্য যারা প্রত্যেক নারীর জন্য তার মা-কন্যার সম্মানের মত হবে। নারীর নিরাপত্তা : চাইছি তবে পাইছি কই? আইন-আদালত নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে কি? মাঝে মধ্যেই তনু-মৌমিতাদের গল্প লিখতে হয়। নারীর শরীরকে যতদিনে পুরুষ ভোগের মানসিকতা থেকে বর হতে পারবে না ততদিন এই সমাজ সভ্য না। সেই পুরুষ সুস্থ না। নারীর জীবনে নতুন সূর্যোদয় হোক। মৌমিতা-অভয়ার সঙ্গে যা হয়েছে তা ক্ষমাহীন। প্রত্যেক পুরুষ এর জন্য কৈফিয়তের কাঠগড়ায়। যে নারীদের নারীর প্রতি বর্বরতায় সমর্থন ও সাহায্য আছে- তাদের ঘৃণা জ্ঞাপনের উপযুক্ত শব্দ আমার ভাণ্ডারে অনুপস্থিত। বর্বরতা কোন স্তরে পৌঁছালে একজন নারীর দেহ কয়েকজনে খুবলে খেতে পারে?- মানুষ হলে সেটা কল্পনা করাও কঠিন। অমানুষের সমাজে আপন মা-বোন-স্ত্রী-কন্যার সামনে দাঁড়ানোর নৈতিক যোগ্যতা আমাদের আর অবশিষ্ট আছে? সব আলো জ্বলে উঠলেও এই বর্বরতার অন্ধকার কোনদিন ফুরাবে না। যারা অমানুষ তাদের বাঁচিয়ে রাখা কিংবা বাঁচতে দেয়া অন্যায়। কিছু পাপ আছে যা শোধরালেও ক্ষতস্থানে মোছে না। কিছু বর্বরকে ক্ষমা করলে অধর্ম চর্চা করা হয়। কাজেই কুলাঙ্গারদের জীবনের দম মিটিয়ে দেয়া জরুরি। অপরাধীর নারী-পুরুষ- আলাদা কোনো পরিচয় নাই। বরং এদের সমূলে বিনাশ আকাঙ্ক্ষিত।