ইতিহাস ক্ষমা করেনি, ক্ষমা করে না

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গত পনের বছরের বেশি সময় দেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হলো ছাত্র-জনতা ও গণ-আন্দোলনের মুখে। তার শাসনের পতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে, একগুঁয়েমি, অহংকার ও অতি আত্মবিশ্বাস। একক কর্তৃত্বের শাসনে শেখ হাসিনার সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূরাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অবশেষে গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছত্রিশ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পরও শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থানের কথা বলা হচ্ছিল।

এমনকি গত রোববার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে আন্দোলন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সারা দেশে সংঘাত-সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপরও শক্ত হাতে দমনের কথা বলা হচ্ছিল। ৪ আগস্ট রোববার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণভবনে বসে শেখ হাসিনা তার সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রী ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৪ আগস্টও সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপরও পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে তারা ধারণা করেছিলেন। কিন্তু চাপ আরো বাড়তে থাকে। এদিন তারা সবাই বুঝতে পারেন, তাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। এরপর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ শাসনে সবাইকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।

আর রাজনৈতিক দিক থেকে হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকেও একা হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলা দেশের জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। সে সময় তাকে বেশ কিছু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল, যা পশ্চিমা সরকারগুলো পছন্দ করেনি। এ অবস্থার মধ্যে ১৯৭৪ সাল নাগাদ তার জনপ্রিয়তা সাংঘাতিকভাবে কমতে থাকে। বিশেষ করে খরার পর দুর্ভিক্ষের মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার জনপ্রিয়তা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। ওই সময়টায় বঙ্গবন্ধুর অনুগত মিলিশিয়া সবখানে ভীতি সৃষ্টি করেছিল।

১৯৭৫ সালে তিনি সব বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশকে একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করেন। এর কয়েক মাস পর আগস্ট মাসে ঢাকায় নিজের বাসভবনে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ তাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অবমূল্যায়ন করেছে এবং সে সময়কালে তিনি যেন ইতিহাসের পাদটীকা হয়ে ছিলেন। তবে ১৯৮১ সালে হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং সে সময় তাকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। ওই সময় তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি গণতান্ত্রিক সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বেশ নির্ভীকভাবে সামরিক শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

বিশেষ করে আশির দশকের শুরুতে ক্ষমতায় বসা জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামনে তিনি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে বসেছিলেন। শেখ হাসিনা তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড আন্দোলন করেন এবং এক পর্যায়ে এরশাদের পতন হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, ২০০১ সালে হেরে যান এবং ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বয়কট করেছে। ২০১৮ সালে বিরোধীরা অংশ নিলেও ভোটারদের ভয় দেখানো এবং কারচুপির ব্যাপক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা তাদের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। হাসিনা তার ক্ষমতার প্রথম দিককার বছরগুলোয় দরিদ্রদের অবস্থান উন্নত করতে এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সে সময় তৈরি পোশাক রপ্তানি ও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচকগুলোকে উন্নত করেছে ও দারিদ্র্য হ্রাস করেছে। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশটি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা বেরিয়ে আসার পূর্বাভাস রয়েছে। এগুলো বড় অর্জন। তবে হাসিনা তার শাসনকালের শেষ দিকে ভয়ানক কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেন। তার দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকেন, আমলাতন্ত্রে তিনি এবং পুলিশ বাহিনীর সিনিয়র পদে অনুগতদের নিয়োগ করেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অদৃশ্য, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করা হয় এবং সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, একটি কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

যে কোটা বাতিলের জন্য সাধারণ ছাত্ররা আন্দোলনে নেমেছিলেন, সরকারি চাকরিতে সেই কোটা আওয়ামী লীগ রাখতে চেয়েছিল মূলত তাদের ঘনিষ্ঠ লোকদের চাকরি নিশ্চিত করার জন্য। শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে তাদের পরোক্ষভাবে রাজাকার বলায় এবং তাদের ওপর সরকারি দলের লোকজন হামলা করায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছিল। সরকারি দলের লোকজনের হামলার পাশাপাশি পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ২০০ লোক নিহত হওয়ায় আন্দোলন আরো তীব্র হয়েছিল। ছাত্ররা এরপর সরকারপ্রধানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু সরকার কোনো ধরনের আপসে না গিয়ে আরো কঠোর হয়। এর ফলে আন্দোলন তীব্র সহিংস হয়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তবে রাজনীতিবিদরা, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকরা তা মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, তারা অজেয়। কেউ তাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবে না এবং তারা বংশপরম্পরায় ক্ষমতা আগলে থাকতে পারবেন। পাকিস্তানে ভুট্টো পরিবার, নওয়াজ শরিফ পরিবার, ভারতে নেহরু পরিবার, বাংলাদেশে শেখ মুজিব পরিবার এবং জিয়াউর রহমানের পরিবারের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে। ভোটারদের এই পরিবারতন্ত্রের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এমন নতুন নেতৃত্বে দেশ চালানোর নিরীক্ষায় নামতে হবে, যাদের পূর্বপুরুষদের এ ধরনের দায়িত্বে থাকার অভিজ্ঞতাই ছিল না। আশার কথা, মানুষ সেই অন্ধ আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। হাসিনার শাসনাবসান তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এটি বাংলাদেশের জন্য একইসঙ্গে একটি সুযোগ এবং একটি ঝুঁকির মুহূর্ত এনে দিয়েছে। বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হলে দেশের অভিজ্ঞতাকে গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিচার করতে হবে।

আর ভারতের জন্য যেটি জরুরি, তা হলো বাংলাদেশকে আমাদের নিজেদের কাঠামোর মধ্যে ফেলে না দেখা। নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ যেন ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে তৎপর থাকা ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মঞ্চে পরিণত না হয়, সে কারণেও দিল্লিকে বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগী হতে হচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যে কোনো সহিংসতা শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে না, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিকেও প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে। এসব যাতে না ঘটতে পারে, সেজন্য এখন পর্যন্ত দেশে সেনাবাহিনী ও ছাত্র আন্দোলন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কর্তৃত্ববাদী দমন-পীড়ন শুধু একটি বিন্দু পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তারপর আর তা কাজ করে না। আসলে ভিন্নমত হলো তরল পদার্থের মতো। এই তরল পদার্থ একটা নির্ধারিত অবস্থা পর্যন্ত আটকে রাখা যায়। পাত্রের ধারণক্ষমতার বেশি ঢাললে তা উপচে পড়বেই। একইভাবে দমন দিয়ে একটা নির্ধারিত অবস্থা পর্যন্ত ভিন্নমতকে রোধ করা যায়। সেই অবস্থা পার হলে বিরোধিতা প্রচণ্ড বিদ্রোহ হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকটা সে রকমভাবেই আমরা স্বাভাবিকের বাইরে গিয়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় শেখ হাসিনার পাশে ছিল মানুষ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধু যে একটিমাত্র দলের পক্ষ নিয়েছিল মানুষ তা-ই নয়, বরং তারা সে দেশটির কর্তৃত্ববাদের অকুণ্ঠ সমর্থক হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছিল। বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের পরও ভারত বাংলাদেশের হাসিনা সরকারকে এতটাই পক্ষপাতমূলক সমর্থন দিয়ে এসেছিল যে, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম পর্যায়ে এই দমন-পীড়নে সেখানকার সমাজে সৃষ্ট গভীর সংকটকে সমস্যা হিসেবে স্বীকারই করা হয়নি।

শেখ হাসিনা তার নিজের দেশের শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে যে ভুল করেছেন, এটিও কিন্তু সেই একই ধরনের ভুল। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন নিশ্চিত করা, যাতে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারে। আওয়ামী লীগ যদি আগামী নির্বাচন বর্জন করে বা নির্বাচনে যদি নামমাত্র ভোটার থাকে, তাহলে আবারো গণতান্ত্রিক উত্থান কর্তৃত্ববাদের দিকে মোড় নিতে পারে। সমস্যাটি শুধু যে বাংলাদেশের বিজয়ী দলগুলোকে ক্ষমতার একচেটিয়া অধিকারকে ভোগ করতে দেয় তা না, বরং তা অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে সংকীর্ণ করে ফেলে। একপর্যায়ে তা দেশকে কার্যত বিরোধী দলশূন্য করে ফেলে। এর ফলে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ছোট ছোট বলয় গড়ে ওঠে এবং সেগুলো একটি আরেকটির প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার ছায়া সরে গেলে, একটি প্রকৃত দলভিত্তিক ব্যবস্থার উদ্ভব হতে পারে। তবে ক্ষমতার পালাবদল ও ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়টি মসৃণ করতে অধিকতর টেকসই দলভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার। তা না হলে এই আন্দোলনের উত্থান সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গণতন্ত্রে রূপ নিয়ে আবার তা স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যেতে পারে।