নতুন বাংলাদেশ গড়তে স্বৈরাচারের দোসরদের বাদ দিতে হবে

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর গত রোববার জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই ভাষণে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনের দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা উঠে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা এ ভাষণকে গঠনমূলক আখ্যায়িত করে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে বেশিরভাগ পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, তার কর্মপ্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যে প্রশাসন যন্ত্র করবে, তা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার গড়ে তোলা। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুসহ সর্বত্র তার দোসররা রয়ে গেছে। এদের দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগকৃত সচিব এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা রয়ে গেছে। তাদের বহালতবিয়তে রেখে ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন কোনোদিনই সফল হবে না। পদে পদে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে।

অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে কিছু পরিবর্তন করেছে। তবে এ পরিবর্তন বেশিরভাগই বদলির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ‘এধারকা মাল ওধার, ওধারকা মাল এদারের মতো’ এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে বদলি করেছে। এসব সচিব ও কর্মকর্তা যেখানেই থাকুক না কেন, তারা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনারই লোক। তারা সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং তার সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রশাসনিক তথ্য এরই মধ্যে পাচার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে গেলেও তার সাজিয়ে রাখা কর্মকর্তারা প্রশাসনে ঠিকই রয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা দাবি-দাওয়ার নামে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মাঠে নামিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল ও কাজ করতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদের এই দোসররা যদি সব জায়গায় থেকে যায়, তাহলে ছাত্র-জনতার স্বপ্নের বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে তোলা হবে? বলার অপেক্ষা রাখে না, ছত্র-জনতা যখন জীবন দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে হটানোর আন্দোলন করছে, তখনও এই প্রশাসন এবং তার সচিব ও কর্মকর্তারা ছিল। তারা আন্দোলন দমাতে ভূমিকা রেখেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তী সরকারই যদি সেই একই প্রশাসন দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তাহলে সংস্কার হবে কীভাবে? স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার লোকজন কি তা হতে দেবে?

পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাদের দ্রুত অপসারণ করা উচিত ছিল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা লতিফুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের ১ ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ১৩ গুরুত্বপূর্ণ সচিবকে অপসারণ করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। প্রশাসনকে সে সময়ের আওয়ামী সরকারের দোসরদের উচ্ছেদ করে নিরপেক্ষ করেছিলেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন সপ্তাহ হয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের দোসর আমলা ও কর্মকর্তাদের প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করেনি। উপদেষ্টাদের কেউ কেউ যে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভিত্তিহীন মামলার শিকার হয়েছিলেন, সেই দুর্নীতি দমন কমিশনে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা যে পুলিশকে কিলিং মেশিনে পরিণত করেছিল, সেখানেও একই অবস্থা বিরাজমান।