সততার বরকতে জীবন ভরে উঠুক!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অন্যায় পথে আয় করে, হাত দিয়ে ঘুষ ধরে কিংবা দুর্নীতিতে জড়িয়ে বুকের মাঝে যে প্রথম ধাক্কাটা লাগে কিংবা ধুকধুক করে- ওটাই আপনার পাপের প্রাথমিক শাস্তি। ভাবছেন, এইটুকু শাস্তিতে আর কীই-বা আসে যায়! নিশ্চয়ই অনেক কিছু আসে এবং যায়! অপরাধীর মন যখন চোর চোর করে, সবার সামনে যখন সাহস করে কথা বলতে পারেন না কিংবা কেউ আপনার পেছনে লাগল নাকি- এমন দুর্ভাবনা যখন ঘুম কেড়ে নেয় কিংবা বিশ্বাস কমিয়ে দেয়- সেটা মোটেও সামান্য ব্যাপার নয়। ছোট ছোট পাপ করতে করতে জীবন এ-তো বেশি বিক্ষুব্ধ এবং অস্থির হয় যা শান্তিপূর্ণ অবস্থানের বিপরীত। অবৈধ অর্থ, লাগামহীন ক্ষমতা এবং অন্যায্য সুযোগ আপনাকে বিপদে ফেলবেই।

একজন সৎ অফিসারের সামনে আপনি কাচুমাচু করেন, যার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ ভোগ করেছেন তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না কিংবা লোকে আপনাকে ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ বলে- এটা আপনার কৃতকর্মের সবচেয়ে ভয়ানক শাস্তি। এই অন্যায় স্বভাব দিনে দিনে আপনাকে এমন ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে প্রবাহিত করবে, যার সম্মুখভাগে ধ্বংস অনিবার্য। আপনি চোরের মতো দুরুদুরু মনে সবার সামনে ঘোরেন, সব সময় উৎকণ্ঠায় বিপর্যস্ত থাকেন- কেউ আপনাকে কিছু বলল নাকি কিংবা পদ হারানোর যে দুশ্চিন্তা তা শাস্তির ব্যাপৃত দিক। আপনার জেল-ফাঁস হবে, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে জেলের কুঠুরিতে একা সময় পার করবেন- এসব শাস্তির সংকীর্ণতর অধ্যায়!

অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আপনার দুর্দিনে আপনার কোনো উপকারে আসবে না, আপনার স্ত্রী-সন্তান আপনাকে ত্যাগ করবে কিংবা আপনার অন্যায়ের দায়ভার আজীবন সুফল ভোগকারীদের কেউ নেবে না- এমন জীবন শত্রুরও না হোক। যে সম্পদ মানুষকে ঠকিয়ে অর্জিত হয়, যে পদক্ষেপ কাউকে অধিকার বঞ্চিত করে কিংবা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অবহেলা করে যে লাভ পকেটে জোটে, তাতে মানুষের-জাতির অভিশাপ আর ঘৃণা সমস্বরে থাকে। দুনিয়ার বাছবিচারে রংতামাশায় মুক্তি মিলতে পারে, তবে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। এমনভাবে পাপের রশি পিছু নেয়, যা পাপীকে নরকের সিঁড়ি পর্যন্ত তাড়িয়ে দিয়ে আসে। তবে শেষ বিচারের লেলিহান পরিণতি আপনি বোধহয় আন্দাজ করতে পারছেন না! নয়তো মন ঘুষ খাইতে, দুর্নীতি করতে কিংবা অন্যায় সমর্থন দিতে চাইতো না।

অন্যায়ভাবে সুযোগ নিলে- যিনি সুযোগ দিয়েছেন তার চেয়েও যিনি সুযোগ নিয়েছেন তিনি বেশি দায়ী হবেন। মানুষের বিবেকের সঙ্গে যে অঙ্গীকার তা ভঙ্গ করে মানুষ যদি ভুল পথে হাঁটে, কামনার লোভে মত্ত হয় এবং কুবাসনায় জাতীয় স্বার্থ অবজ্ঞা করে, তবে তার জন্য কৈফিয়ত দিতেই হবে। ঘুষের টাকায় জীবনযাপন করে শরীর মোটাতাজা করা যায়, আরামে-আয়েশে কাটানো যায়, ভোগ-বিলাসে উন্মত্ত আচরণ করা যায়, সম্পদ বহুগুণ বাড়ানো যায় কিংবা সমাজে দাপট দেখানো যায়; কিন্তু মানুষ হওয়া, সুখী হওয়া কিংবা শুদ্ধ হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়ে। অবৈধ আয়ে, বিপথগামী করা সুযোগে কিংবা কাউকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায়ের সংগ্রামে সাময়িক জয়ীরা বীর নয় বরং জাতীয় কাপুরুষের স্বীকৃতি পায়। পাপ এবং ঘৃণা বিনিময়হীন-প্রতিশোধবিহীন যায় না। যে কোনো অন্যায়ের পাপে জীবনের কোনো না কোনো ঘাটে আটকাতেই হবে। মানুষকে যে সব সেবা দেয়া দায়িত্ব, যে সব বিষয়ের আমানত রক্ষা করা কর্তব্য তা যদি নীতিবিরুদ্ধ যোগসাজোশে অর্থ কিংবা সুযোগের বিনিময়ে হয় তবে তা অন্যায়। নিজে অন্যায় না করা এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়ার যে দৃঢ়তা তা মানুষকে মানুষ করে গড়ে তোলে। স্বল্পায়ুর সুযোগে ভালো মানুষ হবো নাকি মিশে যাবো মন্দের সঙ্গে, সে সিদ্ধান্ত একান্তই যার যার। তবে ভালো মানুষের সম্মান আছে, শ্রদ্ধা আছে।সবচেয়ে বড় কথা, আত্মতৃপ্তি যেটুকু আছে তা আর কোনো কিছুর সঙ্গে তুল্য নয়। সততার বরকতে জীবন ভরে উঠুক- এই হোক প্রত্যয়, এটুকের প্রত্যাশায়। মাত্র একবার যে মানবজীবন লাভের সুযোগ মিলেছে তা যেন পাপের দরিয়ায় না ডোবে।