ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে

মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ
সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনা অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ব্যবসাীয়রা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এমন বাস্তবতা ও পরিণতি দেখা দিয়েছে তা নয়। আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনে গত ১৬ বছরে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। জাল-জালিয়াতি ও বেপরোয়া লুণ্ঠনের কবলে ব্যাংক-বিমা সেক্টর, পুঁজিবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দেউলিয়াত্বের মুখোমুখী দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশি-বিদেশি সংগঠন ও বিভিন্ন দেশের তরফে সময়ে সময়ে সর্তকতা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা পতিত স্বৈরাচারী সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের কোনো প্রতিবাদ না করে সব সময় সমর্থন ও সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকাসহ সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে আবু সাঈদসহ অনেকে শহীদ হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সময়ও ব্যবসায়ী নেতারা গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে ছাত্র-জনতাকে কঠোর হস্তে দমনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের দলীয় কর্মীর ভূমিকা পালনের বদলে রাজনৈতিক সমঝোতা, দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সুশাসন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের পক্ষে অবস্থান নিলে হয়তো দেশে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে স্বাধীনতাত্তোর ৫৩ বছরেও বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষত ১৬ বছরে দেশে যে অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট ও পাহাড়সম সমস্যা-বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়েছে তা রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সবাইকেই ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সীমাহীন অপরাধ-অপকর্ম করে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ১৬ বছরে গড়ে ওঠা মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগিরা পালিয়ে বিদেশে কিংবা আত্মগোপনে চলে গেলেও পর্দার অন্তরালে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশকে আরো অস্থিতিশীল, অশান্ত ও অকার্যকর করে তুলে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবকে ব্যর্থ করার নানামুখী ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচারের লেসপেন্সার ও বশংবদ ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যখন ২০ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি অভিনন্দন ও সমর্থন ব্যক্ত করেন, দেশের মানুষ তা ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর দুদিন পরেই ২২ আগস্ট সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে ব্যবসার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেছেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে এমনিতেই সেনাবাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অসহযোগিতা ও বিজিবির নিস্ক্রিয় ভূমিকার মধ্যে সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার কাতারে এসে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তাদের হারানো ঐতিহ্য ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট-চট্টগ্রামসহ দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে দুর্যোগ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের সাথে সেনাবাহিনীর নিবিড় এক মেলবন্ধন হিসেবে দেখা হচ্ছে। শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে বিজয়ের সন্ধিক্ষণ থেকে পরবর্তী চলমান সময় পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতি দেশের ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। পক্ষান্তরে পতিত স্বৈরাচারের দোসর ব্যবসায়ী নেতারা যখন নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে সেনাপ্রধানের সাথে দেনদরবারে লিপ্ত হন, দেশের মানুষ তা সন্দেহের চোখে দেখবে, এটাই স্বাভাবিক।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রজ্ঞা, মেধা, আন্তর্জাতিক সুনাম, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা দেশের ক্রান্তিকাল উত্তরণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়, চীন-জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নয়ন সহযোগীরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পক্ষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যার তদন্তে এরই মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত টিম মাঠে নেমেছে। পিলখানা গণহত্যা, আয়নাঘরসহ প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও সেনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। গত ১৭ বছরে দেশের সেনাবাহিনীসহ পুলিশ, বিজিবি, আনসারের মতো সংস্থাগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের পর এরইমধ্যে ২৪ দিন অতিক্রান্ত হলেও সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য সংস্থাগুলো জনগণের আস্থা অর্জনের কোনো চেষ্টাই করেনি। সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। আগেই বলেছি, দেড় দশকে জঞ্জাল রাতারাতি সাফ করা সম্ভব নয়। সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। একেকটি সংস্থার কর্মীরা হঠাৎ করেই নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে এসে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা দেখা গেছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও অর্থ উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাব করেছেন। অথচ বন্যা উপদ্রুত কোটি মানুষের জন্য তাদের কোনো সম্মিলিত উদ্যোগ বা প্রতিশ্রুতি দেখা যাচ্ছে না। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ছাত্র-জনতার রক্ত-স্নাত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এক নতুন অগ্রযাত্রার সূচনা করেছে। এই বিপ্লবী অগ্রযাত্রায় দেশের বৃহত্তর ব্যবসায়ী সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগীদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। জুডিশিয়াল কিলিং, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের বিচার নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, অসংখ্য গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আয়নাঘরের নির্যাতন, রানাপ্লাজা ট্রাজেডির মতো ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষ এখন অনেক ঐক্যবদ্ধ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত