সার্বিক সংস্কারের প্রত্যাশা!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সীমাহীন অন্যায় করলে, ক্ষমতার পাশে থেকে দম্ভভরে কথা বললে যে জিল্লাতির জীবন মেলে তা বিচারপতি মানিকের পরিনতি দেখে আন্দাজ করা গেছে বোধহয়। ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের মানুষকে শিক্ষা নিতে হয়। ইতিহাস সৃষ্টিকারীদের জন্যও ইতিহাসে লেসন থাকে। মানুষের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, কোনো ধরদেনর কথা বলা সমূচিত নয় কিংবা কোনো পরিকল্পনায় সামনে চলতে হবে সেটার প্রেসক্রিপশন বোধহয় পেয়ে গেছি। এই মুল্লুক কোনো অসীম শক্তির মালিকের নয়, যেখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সচল থাকবে। মানুষের শাসনের ভার যখন মানুষ পায়, তখন যদি মানুষ মানুষের ওপর সীমালঙ্ঘন করে তবে খোদায়ী গজবের সঙ্গে মাজলুমের যে প্রতিশোধপরায়ণতা যুক্ত হয় তা নির্যাতিতকে মুক্ত করে ছাড়ে। অন্যদিকে নির্যাতনকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগের মুখোমুখি দাঁড় করায়। জনতার ভাষা বোঝার সক্ষমতাতেই যেখানে আমার পদণ্ডপদবির অস্তিত্ব ভর করে, সেখানে জালিমের পক্ষ নিলে, মানুষকে জুলুম করলে কিংবা যে সসীম স্বাধীনতা মানুষ ভোগ করে সেটুকুর পথ রোধ করলে কী বিপদ আসে, তা জাতির সামনে দিবালোকের ন্যায় প্রকাশ্য। বীরদর্পে চলতে থাকা, সত্য-মিথ্যা গুলিয়ে বলতে থাকা এবং যাকে তাকে ধরতে থাকা, হেনস্তা-হয়রানি করতে থাকা একটা পরাশক্তি আপাত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার যে ব্যাপারটি তা যদি বিজয়ী এবং বিজেতাকে দরস না দেয়, তবে আবার দুর্দিন ঘনাবে। সময়ের পালাবদলে ক্ষমতার অক্ষমতা প্রকাশ করবে। প্রযুক্তির অবাধপ্রবাহের যুগে কোনো জনসমষ্টির বুকে কোনো বাঁধ চাপিয়ে দিয়ে সত্য বিমুখ রাখা যায় না। হোমরাচোমরাদের ঘিরে থাকা চাটুকার শ্রেণি গুড়ের লোভ ফুরোতেই যেভাবে নিরুদ্দেশে গেছে- এই দৃষ্টান্তে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সেবকদের জন্য শিক্ষা আছে। যদি তারা অন্তর চক্ষু থেকে উপলব্ধি করতে পারে, তবে ঘৃণাহীন জীবনের মালিক হতে পারবে। নয়তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াও থমকে যাবে। তখন অসীম শক্তি দেখানো রাজশক্তির ঝান্ডা উঁচিয়ে রাখার মতো কান্ডারি অবশিষ্ট থাকবে না। লেজুড়বৃত্তিক যে শাসনব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপের যে সংস্কৃতি কিংবা ব্যক্তির আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার যে নেশা ও পেশা তার খেসারত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই বারবার মেটাতে হবে। হরিলুটের যে স্বভাব তা চেয়ারে বসা মানুষকে ক্ষণে ক্ষণে বদলানোর মত বদলালেও চিরায়ত চরিত্র পাল্টাবে না। জনতার ভাগ্যাকাশে যে চাঁদ উদিত হোক না কেন, তাতে দেশের হাল বেহাল দশা কাটাতে পারবে না। সিস্টেম সংস্কার না হলে শাসক বদলিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হবে না।