যে কাজগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত

সুমন দত্ত, লেখক সাংবাদিক

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে তিন সপ্তাহ হতে চলল। এখনো কমেনি নিত্য পণ্যের দাম। দেশকে যে অবস্থায় পেয়েছে নতুন সরকার এখন থেমে আছে সেখানে। অগ্রগতি কিংবা নিম্নগতি কিছুই হচ্ছে না। পুলিশ ডিউটি করছে ঢিলেঢালা। প্রশাসনে চলছে গা ছাড়া ভাব। হঠাৎ করে একটা স্টাবলিশ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় প্রশাসনে দল নিরপেক্ষ লোক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের রাজনীতির খেসারত দিচ্ছে গোটা জাতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয়করণ চর্চা। শেষ করে দিয়েছে সব পেশার রাজনৈতিক বিমুখ ব্যক্তিদের। এজন্য ইউনূস সরকার বাধ্য হয়ে নীরব থাকছেন। দেশ চালানোর জন্য নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এর মাঝে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম চলছে সমন্বয় হীনভাবে। বন্যার পানি নেমে গেলে দেখা দেবে ডায়রিয়ার মতো রোগগুলো। ডেঙ্গু ছেড়ে কথা বলবে না। এদিকে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা আছেন লুকিয়ে। প্রশাসক নিয়োগ করলেও কাজের গতি নেই। গলিতে দেখা যাচ্ছে না ফগিং করতে সিটি কর্পোরেশনকে।

বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ নেই। আগের সরকারের নীতি ছিল বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিতে এখানে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, জনগণ তা জানতে চায়। জনগণ চায় গ্যাসের সংযোগ। আগের সরকার ছিল প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও পুলিশকে খুশি করার নীতিতে। জনগণ থেকে বহু আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ওই সরকার। ভোট করত নিজেরা নিজেরা। এতে মদদ দিত প্রতিবেশী দেশ ভারত। এখন জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরলে জনগণের চাওয়াটা পূরণ করা এই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব। সংবিধান সংশোধন আইন উপদেষ্টা দেখবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখবে এমনভাবে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। শুধু ভোটে জিতলেই নয়। সরকার গড়তে কত শতাংশ ভোট প্রয়োজন হবে এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। তা না হলে অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনুচ্ছেদ ৭০ সংবিধান থেকে তুলে নিতে হবে। নিবর্তনমূলক আইন বিলোপ করতে হবে। তথ্যপ্রবাহ অবাধ করতে সাইবার আইন তুলে নিতে হবে।

প্রবাসীরা যাতে সহজে জাতীয় পরিচয়পত্র পায় এমন আইন করতে হবে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন সহজ করতে হবে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমাতে হবে। নদী রক্ষায় স্বাধীন নদী কমিশন গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নদী দখলকারী ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ ধ্বংসকারী পলিথিন নিষিদ্ধ করতে হবে। ভরাট হয়ে যাওয়া খাল বিলগুলো পরিষ্কার করতে হবে। খাল বিলের জায়গা উদ্ধার করতে হবে। পানির দাম কমাতে হবে। ওয়াসার দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। যানজট দূর করতে রিকশা ও ট্যাম্পুর গতিবিধি এলাকা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বাস যাত্রা নিয়মে আনতে একটি লাইন মেইনটেইন করতে হবে। সড়কে ওলটপালটভাবে চলে বিভিন্ন গন্তব্যের বাস। সেগুলোকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব কাজ সবার আগে করতে হবে।