ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্রুত মেরামত করতে হবে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
দ্রুত মেরামত করতে হবে

ভয়াবহ বন্যার পর ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। এতে সড়ক-মহাসড়কের কী বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহনের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। মহাসড়কের অনেক জায়গা ভেঙে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বোঝার উপায় নেই, এটি মহাসড়ক কি না। মহাসড়কের এই দুরবস্থার কারণে তিন-চার দিন ধরে বিপুলসংখ্যক কনটেইনারবাহী ও অন্যান্য যানবাহন আটকে থাকে। যানবাহন চলাচল ধীরগতির হয়ে পড়ে। গতকাল এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহাসড়কের কুমিল্লা ও ফেনী অংশের বেশিরভাগ জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লার পদুয়াবাজার বিশ্বরোড থেকে ফেনীর লেমুয়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৮৭ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। চলাচলের সময় এসব ভাঙা অংশ ও গর্ত পার হতে গিয়ে অনেক গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, বন্যার সময় মহাসড়কটি ডুবে যাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ায় গত রোববার থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

পণ্য পরিবহনের ৮০ ভাগের বেশি সম্পন্ন হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং রপ্তানি পণ্যের প্রধানতম রুট এই মহাসড়ক। বন্যায় এর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় পণ্য পরিবহন এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কয়েক হাজার গাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় রওনা দিয়ে বিপাকে পড়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এসব যানবাহন খুব ধীর গতিতে ভাঙা অংশ পার হচ্ছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পণ্যের বৃহৎ আড়তে লেনদেন প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে নিত্যপণ্যের সরবরাহে ধস নামবে। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধি পাবে। মহাসড়কটি দ্রুত চলাচল উপযোগী না করলে সংকট আরো বাড়তে থাকবে। কারণ, বাজার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। তারা এই উসিলায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দেবে। এদিকে, মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রপ্তানির প্রধানতম খাত গার্মেন্ট ব্যাপক লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে। এই মহাসড়কের মাধ্যমেই খাতটির প্রায় শতভাগ বন্দরে শিপমেন্ট হয়। মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সময়মতো শিপমেন্ট করা যাচ্ছে না। অনেকে ক্রেতা ধরে রাখার জন্য জরুরিভিত্তিতে এরোপ্লেনে শিপমেন্ট করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহাসড়কে আর কয়েকদিন এ পরিস্থিতি বিরাজ করলে গার্মেন্ট খাত ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন। তারা আশা করছেন, সরকার দ্রুত মহাসড়ক সংস্কার করে যান চলাচল স্বাভাবিক করবে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণকার্যক্রম চলছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় সবশ্রেণির মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকারকে এখন ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মেরামতের কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে মেরামত কাজ শেষ করে পণ্য পরিবহন মসৃণ করতে হবে। এটিই এখন সরকারের প্রধান কাজ। এরই মধ্যে মহাসড়ক মেরামতে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে অধিক তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিতে হবে। প্রয়োজনে ছুটি বাতিল করে তাদের কাজে লাগাতে হবে। অতীতে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, এ সময়ে তা মেরামতে দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণ হবে না বলে ধরে নেয়া যায়। ফলে মেরামত দ্রুতই সম্পন্ন হবে আশা করা যায়। যানবাহন যাতে শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে মহাসড়কে চলতে পারে, এজন্য হাইওয়ে পুলিশকে অধিক তৎপর হতে হবে। মহাসড়কটি অবিলম্বে চলাচল উপযোগী করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত