রং আড়াল করা যায় তবে রূপ নয়!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

হিউম্যান সাইকোলজি বলে, যার যেটা নেই, সে সেইটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলে! সেই হারানোর মত হইচই করে। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে আয়োজন করে প্রচার করে! বিগত কয়েক বছর নৈতিকতাণ্ডসুশাসন এবং শুদ্ধাচার নিয়ে কত কথা শুনেছি। আসলে কী সেসব ছিল? যার চাকরিতে ঘুষের সুযোগ নেই, সে ঘুষ নিয়ে আলাপ করে মজা পায়! নীতিকথা কয়! সুযোগ থাকার পরে ফিরে থাকলে তারে সাধু বলা যায়! আছে? সংখ্যায় অল্প হলেও আছে। যার প্রেমিকা নেই তার ভালোবাসা দীঘিতেও উথলে পড়ে। যার যেখানে শূন্যতা তার সেসব নিয়ে আলোচনা করতে ভীষণ ভালো লাগে। ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা দাম্পত্য যার অসুখ যত গভীর, একাকিত্ব যত করুণ, সে ওসব নিয়ে বেশি নাড়ে। জীবনের রং পাল্টাতে সে সামাজিকমাধ্যমে সকাল বিকাল ছবি পাল্টায়। পালের মধ্যে যে সবচেয়ে অলস সে লেখে এবং যে জানে না কিছুই সে বেশি বলে! সুযোগের অভাবে সাধু সাজা ঠাকুর সমাজ-রাষ্ট্রের চিকিৎসা করে। যার পাপ যত বেশি, সে তত পুণ্যের বয়ান করে! যে যুক্তিহীন তার বিরোধিতা বাহাসে মেটাতে চায়! যে সবচেয়ে বেশি সঙ্গহীনতায় ভোগে তার কাছে আড্ডার উপকারিতা ততোধিক- শোনা যায়। যে দেহ-মনে পঁচে ক্ষীর হয় গেছে কিংবা চিন্তা হয়েছে স্থূল তার কাছে উপদেশের রসদ তত সমৃদ্ধ হয়ে আছে। সে শাসায় বেশি তার কাছে সবচেয়ে কম ক্ষমতা। গলার স্বর উঁচু করা, হম্বিতম্বিতে শক্তি দেখানের মতো দুর্বল আর কেউ না। শূন্যতা পূর্ণতার মেকি ভাব ধরে বসে আছে।

শিকার যদি সেঁধে তার আয়ত্তে আসে, তবেই একবার কৃত্রিম আওয়াজে নাগালে নিতে ঝাঁপ দেবে। তবে ব্যর্থ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা! গভীর কূপের জল যত কম নড়ে, চতলা তলের জল তত স্থির থাকে না। সে নাচে-দৌড়ায়। টুপ করে কলসিতে আটকে পড়ে চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়। আইনের শাসনের কথা বলে সে বেআইনি কাজ করে না। যারে তারে ক্ষমতা দেখাতে সে বাড়ে না। বেহিসাব কথা বলে না, অপ্রয়োজনে দু’কদম ফেলে না। নড়ে না রাজ্য ছেড়ে। ভন্ড সাধু চিনতে হলে কথকের কথার সঙ্গে কাজ মেলাতে হবে। যে অধিক বলে তার মিলবে না! সে নিজস্ব ব্যাখ্যা ভুলে যুক্তি-আপসের ছাদের তলায় আসবে না। আজকাল মানুষ যা বিশ্বাস করে তা বলে না। যা বলে সে মতে চলে না। মুখোশের আড়ালে কে মানুষ, আর কে মানুষের বেশে পশু, তা ধরতে পারাও কঠিন। সরল বয়ানে কত লোকের হৃদয় ভাঙে- এমন ধাপ্পাবাজ-দাগাবাজ সমাজের চারপাশে অল্প নয়, সে ফাঁদানো গল্পে মুগ্ধ করে খোসা করে ছেড়ে দেয়। যে যা ধারণ করে না, সে সেটাই বেশি প্রচার-প্রকাশ করে।

এই স্বভাবের কাউকে এসব করতে বারণ করে মরণ ফাঁদে ফেলে। যদি কথা তার পক্ষে না যায়, তবে সে অন্যকে নিরপেক্ষ ভাবে না। যতদিন পর্যন্ত মানুষ নিজস্ব বিশ্বাসের কথা বলবে না, ততদিন মানুষের ঠকা ও ঠকানো বন্ধ হবে না। ছদ্মবেশে শয়তান থাকতে পারে; কিন্তু মানুষের তার নিজস্ব চরিত্রে ফেরা উচিত। কারো সামনে অভিনয় করে যা জয় করা যায়, তার অধিক ক্ষয় হয়ে যায়। শুভের পরিসমাপ্তি ঘটে। যা আছে তাই শুধু বলা উচিত। লোক ঠকিয়ে, ঘৃণা ছড়িয়ে জেতা যায় না। মানুষের ভেতর-বাইরে সমান না হলে সেই সমাজে ধোঁকাকে রুখে দেয়া যাবে না। যে ঠকাবে সে কর্মফলে ঠকবে। রং আড়াল করা যায়, তবে রূপ নয়। একদিন না একদিন সত্য উন্মোচিত হয়; হতেই হয়।