ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান

স্থিতিশীল নিরাপত্তা জরুরি
খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান

ফ্যাসিবাদী সরকার দেশে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে পুলিশকে পুরো মাত্রায় নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ার বানিয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঠেকাতে পুলিশ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড ঘটায়। যে কারণে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় আড়াই লাখ সদস্যের পুলিশ বাহিনীর পুরোটা উধাও হয়ে যায়। আমাদের দেশের আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে দেখা যায়নি। এখন পুলিশের বেশিরভাগ সদস্য ফিরে এলেও আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পালিয়ে থাকা একটি অংশ। এই বাহিনীর বেহাত হওয়া বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। আইনশৃঙ্খলার নড়বড়ে অবস্থার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্ত্র উদ্ধারে আজ বুধবার যৌথ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। এর সফলতার ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা। এবারের অভ্যুত্থানের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি ছিল আন্দোলনকারীদের নিরস্ত্র কর্মসূচি পালন। সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ও ২০ হাজারের বেশি আহত হওয়ার পরও ছাত্র-জনতা ছিল নিরস্ত্র। তবে পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালানোর জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা চড়াও হলে থানা ও ফাঁড়িতে থাকা সদস্যরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। খোয়া যায় বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। পুলিশের ওইসব অস্ত্র ছাত্র-জনতা ব্যবহার করেছে তার কোনো নজির নেই। জানা যায়, পুলিশের বিভিন্ন ধরনের প্রায় আট হাজার আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের মতো উদ্ধার বা জমা পড়েছে। খোয়া যাওয়া বিপুল গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের বড় একটি অংশও উদ্ধার হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স এসএসএফের হাতে থাকা অত্যাধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম খোয়া গেছে। এর মধ্যে আছে অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, গ্রেনেড ও ড্রোনসহ পাঁচ কোটি টাকার সরঞ্জাম। সোয়াত-র‌্যাবসহ সরকারের বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্রশস্ত্রও খোয়া গেছে। আরেকটি গুরুতর শঙ্কার বিষয়- আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নামে সারা দেশে গড়ে ওঠা খুনে বাহিনীগুলো। বিগত ১৫ বছরে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে এদের দেখা গেছে। এদের হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চরম মুহূর্তে সারা দেশে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আওয়ামী গুণ্ডা বাহিনী মানুষজনকে হত্যা করেছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তে খুনে বাহিনীর সব সদস্য গাঢাকা দিয়েছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আছে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নিজের লোকদের দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। এরা সবাই দলীয় নেতাকর্মী ও দলের প্রভাব বলয়ে থাকা লোকজন। সরকার পতনের পর এদের অনেকে উধাও। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এ সময়ে দেয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। গতকাল থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় এই বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে নাগরিকদের নিরাপত্তা উচ্চ ঝুঁকি থেকে যাবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক নয়। বিগত সরকারের আমলে পুলিশের চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা নিজেদের স্বার্থে মাফিয়া সরকার টিকিয়ে রাখতে তৎপর ছিলেন। এ অবস্থায় একটি কার্যকর পুলিশ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সহজ কাজ নয়। এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল আজ বুধবার থেকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে শুরু হচ্ছে যৌথ অভিযান। আগের চেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা ও জনবল নিয়ে এই অভিযান চালাতে হবে। আমরা আশা করব, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত