ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে

অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকা
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে

গত ৫ আগস্ট দেশে স্বৈরাচারী মাফিয়া সরকারের পতন ঘটেছে। নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার নতুন দরোজা খুলে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। পুলিশ ও অস্ত্রধারি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলিতে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু এবং ২০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। নানা সূত্রে এসব পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও শহীদ ও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো উঠে আসেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার আন্দোলনে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির ত্বরিৎ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং হতাহতদের পরিবারগুলোর প্রতি প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। সারাদেশে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে আরো সময় লাগতেই পারে। তবে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকতভাবে তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করতে পারে। এখনো অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ ও নানামাত্রায় আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। তাৎক্ষণিক উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে গুলিবিদ্ধ অনেকে ইনফেকশনের শিকার হয়ে হাত-পা কেটে পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়েছেন। শহীদ এবং আহত অনেকেই পরিবারের একমাত্র আশার প্রদীপ ছিল। কেউ কেউ ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। প্রিয়জনকে হারিয়ে কিংবা পঙ্গুত্ব নিয়ে যে সব পরিবার অসহায় ও নিঃস্ব হয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় উদ্বিঘœ হয়ে পড়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কর্তব্য।

দেশের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা পরিবারগুলোর অসহায়ত্ব মেনে নেয়া যায় না। চোখে রাবার বুলেট লেগে ৫ শতাধিক ব্যক্তি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। সারাদেশে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এখনো অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা উন্নত চিকিৎসা না পেলে অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব ও অঙ্গহানির ঝুঁকিতে রয়েছে। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অনেকেই কর্মজীবী ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাব্যবস্থার অধীনে থাকায় তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তারা ও পরিবারের সদস্যরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। দেশে তাদের জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এরই মধ্যে আহতদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ঘোষণা দিলেও তা এখনো কিছুটা অস্বচ্ছ ও অপ্রতুল বলেই মনে হচ্ছে। হতাহতদের সুচিকিৎসা ও পরিবারের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল গঠনের উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। আর্থিক সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মতো তারাও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে জাতি এক নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আমরা তাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাগুলো হতাশার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে দিতে পারি না। সর্বোচ্চ সুযোগ ও সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আগে শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারী সকলের সবিস্তার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই।

গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে হতাহতদের কারো কারো সচিত্র বৃত্তান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের দু’একজনের কৃত্রিম হাত-পা লাগানোর খরচসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, সঠিক তালিকাসহ যার যার বাস্তবতায় প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও অর্থ সহায়তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যায় মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে সারাদেশে সামাজিক ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে যে অভাবনীয় সাড়া পাওয়া গেছে তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে এ ধরনের ত্রাণ তৎপরতা সফল করা সম্ভব ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের সহায়তায় প্রয়োজনীয় তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলে সেখানেও দেশের সাধারণ মানুষ ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এই আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের স্বার্থ ও কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশা, ত্যাগ ও আবেগ জড়িত। আধিপত্যবাদী ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতায় জেঁকে বসা স্বৈরাচারের লৌহ গরাদ ভেঙে জাতিকে মুক্ত করার মহানায়কদের কাছে জাতির ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না। স্বাধীন বাংলাদেশের কাঙ্খিত লক্ষ্য ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তার আগে প্রথমেই সকল শহীদ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের তালিকা প্রকাশের সাথে সাথে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সম্মিলিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত