ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএসএফ সীমান্ত এলাকাকে হত্যার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে

রাকিবুল ইসলাম
বিএসএফ সীমান্ত এলাকাকে হত্যার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে

ভারতের সঙ্গে মোট ছয়টি দেশের সীমান্ত। পাঁচটি দেশের সীমান্তে শান্তিপূর্ণ, সহমর্মিতা ও সহযোগিতাপূর্ণ থাকলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে থাকে। বিএসএফ যেন সীমান্ত এলাকাকে একটি দক্ষিণ এশিয়ার হত্যার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। নানা অজুহাতে বাংলাদেশের সীমান্ত গ্রামগুলোর নিরস্ত্র এবং অসহায় স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যা করছে গরু চুরির তকমা দিয়ে।

পহেলা সেপ্টেম্বর রোববার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে স্বর্ণা দাস নামে ১৪ বছর বয়সি অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। সেদিন রাতে মা সঞ্জিতা রানী দাসের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় থাকা ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ইরানি থানার কালেরকান্দি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা মারা যায় এবং স্বর্ণার মাসহ কয়েকজন আহত হয়। স্বর্ণার মরদেহ বিএসএফ নিয়ে যায়। স্বর্ণা দাসের মরদেহ ৪৫ ঘণ্টা পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দুই দেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে স্থানীয় চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ওই কিশোরীর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। সীমান্তে স্বর্ণা হত্যার ১৩ বছর আগে ২০১১ সালে আলোচিত আরেক হত্যা হয়েছিল কুড়িগ্রামের ফেলানীর।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে দিল্লিতে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল বাংলাদেশে। বিয়ে দিতে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে সঙ্গে করে আসেন অনন্তপুর সীমান্তে। ৭ জানুয়ারি ভোরে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মরদেহ। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশের ছবি আলোড়ন তুলেছিল দেশে-বিদেশে। ফেলানীর ঝুলে থাকার ছবি প্রচার হওয়ার পর গণমাধ্যমসহ মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনায় ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়।

৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পিছিয়ে এখনো আদালতে ঝুলে আছে পিটিশনটি কাঁটাতারে ঝুলে থাকার মতো করেই। একটা পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিগত দশকে বর্ডারে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের বর্ডারে। দ্বিতীয় ছিলো বাংলাদেশ ও ভারত বর্ডার অথচ আমারা ছিলাম সবচেয়ে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র!

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রায় নিয়মিতই সীমান্তে গুলি চালিয়ে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। দুই বৈরী প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে গোলাগুলি কিংবা হত্যাকাণ্ড বিরল নয়। কিন্তু পরস্পরকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধু দাবি করে আসা দুই দেশের সীমান্তে একটি দেশ কর্তৃক নিয়মিতভাবে অন্য দেশের নাগরিককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত