ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশ হোক দুর্নীতিমুক্ত

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ
দেশ হোক দুর্নীতিমুক্ত

বৈষম্যমুক্ত সমাজ ও দেশ গঠন এবং মানবসভ্যতা বিকাশে দুর্নীতি অন্যতম অন্তরায়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সাধারণত সম্পদে অপ্রতুল দেশগুলোতে দুর্নীতি বেশি রয়েছে। অধিকাংশ অপরাধের উৎস হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করা যায়। এছাড়াও অপরাধ দমনেও এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। দুর্নীতি শুধু গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই দুর্বল করে না বরং কখনো কখনো সন্ত্রাসবাদকেও উৎসাহিত করে। পাশাপাশি সমাজের মূল কাঠামোর ক্ষয় সাধন, অর্থনীতির উন্নয়নে বাধা, জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রকাশিত রূপ হলো ঘুষ, অনুপ্রবেশ, অর্থপাচার, অবৈধ লেনদেন, নেপোটিজম, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ সুবিধা প্রদান, কর্ম ক্ষেত্রে ফাঁকি দেয়া, বিধিবহির্ভূত সুবিধা গ্রহণ, আইনবিরুদ্ধ সুবিধা গ্রহণ ও প্রদান, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি।

বৈশ্বিক দুর্নীতি সূচকে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্যাবলিতে বাংলাদেশের অবস্থান কখনোই সন্তোষজনক দেখা যায়নি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার এক নম্বর অর্থাৎ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালেও তার তেমন পরিবর্তন না হয়ে সিপিআই সূচকে ১৩তম অবস্থানে থাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টিআই ২০২৩-এর প্রতিবেদনে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে নিম্নক্রমে বাংলাদেশকে ১০তম উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ বিগত দুই যুগেও দুর্নীতি রোধে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়নি।

বাংলাদেশে সংঘটিত ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির ঘটনাগুলো হলো, স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশে খাদ্যদ্রব্যের কেলেঙ্কারি, বিদ্যুতের খাম্বা কেলেঙ্কারি, হলমার্ক অর্থ লোপাট কেলেঙ্কারি, রূপপুরের বহুল আলোচিত বালিশ কাণ্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর্দা কেলেঙ্কারি, ক্যাসিনো কাণ্ড, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংকের অ্যাননটেক্স, নির্মাণ কাজে দেশের বিভিন্ন স্থানে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশ্ন ফাঁস, মতিউরের ছাগল কাণ্ড, সাবেক আইজিপির আলাদিনের চেরাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও অন্যান্য, করোনাকালীন জনৈক ডাক্তারের কাণ্ড। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলাবাজি, টোলবাজি জাতীয় দুর্নীতি সন্ত্রাসী দুর্নীতির চরিত্র ধারণ করে সমাজে অবস্থান করেছে।

দেশের দুর্নীতিচক্রে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ভূমিকা খুবই শক্তিশালী। চাকরিবিধির প্রতি অবজ্ঞা করে এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। আইনের দুর্বলতা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব ও দলীয়করণের ফলে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা সহজেই দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায় এবং পুনরায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এটি একটি চেইনের মতো হয়ে পড়েছে। বেসরকারি খাতের অনেক কোম্পানি বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে থাকে। ব্যক্তিগত কর ফাঁকি দেয়া, আমদানি রপ্তানিতে ইনভয়েসিং ও ওভার ভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কর ফাঁকি এবং প্রকৃত সম্পদ ও লাভের পরিমাণ গোপন করার দুর্নীতি সম্পর্কিত সংবাদ অহরহ পত্রিকায় এসে থাকে।

দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ২০০৪ সালের ৯ মে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করা হয়। এছাড়াও দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯, ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৯, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯, চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইন ২০১০, জনসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা প্রদান আইন ২০১১, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ ইত্যাদি। এই আইনগুলো দুর্নীতি দমনে সহায়ক আইন। কিন্তু অদৃশ্য এক কারণে এতসব আইনের ফলেও দুর্নীতি হ্রাস ও দুর্নীতি নিরোধে সূচক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। এজন্য আইনের ব্যর্থতা নয় বরং আইন প্রয়োগের ব্যর্থতাকেই দায়ী মনে করছেন নাগরিক গোষ্ঠী। দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী প্রত্যেক সরকারই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তা কাগজে-কলমে থেকে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত