ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ সফল হোক
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

গত বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এ ভাষণটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে সুনির্দিষ্ট ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব কমিশনের প্রধানও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. শাহদীন মালিক। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রধান হিসাবে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা সবাই দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের এ উদ্যোগে আমরা আশাবাদী। তারা কাজ শুরু করবেন ১ অক্টোবর এবং রিপোর্ট দেবেন ৩ মাসের মধ্যে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশনপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতনের ফলে জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে। এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই যে, এ সংস্কার করতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। কাজটি যতই কঠিন হোক, তা প্রতিপালনে অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। জনগণের প্রত্যাশাও এটি। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন দেশের প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিরসনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও বিষয়টি উঠে এসেছে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার লুটপাট করার জন্য নতুন করে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ায় মুদ্রাস্ফীতির শিকার হয়েছে দেশের মানুষ। এ অতুলনীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।’ বস্তুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের অন্যতম চাওয়া। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে সরকার এক্ষেত্রে সফল হবে বলে আমরা আশাবাদী।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকার দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। অতি সত্বর এসব কালো আইন বাতিল এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে বার্তাটি দিতে চেয়েছেন, তা সবাই অনুধাবন করবেন আশা করি। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে মাত্র মাসখানেক আগে। তারা যাতে স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন, সেদিক সবারই খেয়াল রাখা উচিত। তবেই সফল হবে সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত