ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধে কঠোর হতে হবে

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দিনরাত পরিশ্রম করে ভেঙেপড়া দেশ পুনর্গঠনে কাজ করছে। শেখ হাসিনা ও তার রেখে যাওয়া দোসরদের একের পর এক নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অন্তর্বর্তী সরকার মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যানজট তাদের যাতায়াতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী এবং মহাসড়কে বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটে সবকিছু স্থবির করে দিচ্ছে। যানবাহন চলাচল মসৃণ করা ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব হলেও তারা তা যথাযথভাবে পালন করছে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার দায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ও ট্রমার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মস্থলে যোগ দিতে অনীহা এবং যোগ দিলেও দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যের কারণে সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের এই শৈথিল্যের কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকে রাজধানী সয়লাব হয়ে গেছে। এসব ত্রিচক্রযান এতটাই বেপরোয়া যে, এগুলো কোনো নিয়মকানুন মানছে না। ভিআইপি সড়ক থেকে শুরু করে সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এরইমধ্যে রাজধানীর আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৫ লাখ রিকশা ও ইজিবাইক প্রবেশ করেছে। এগুলো সড়কে যেমন খুশি তেমন চলছে এবং তীব্র যানজট সৃষ্টি করে রাজধানী অচল করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভাদ্রের তীব্র গরমে সারা দেশে যে লোডশেডিং চলছে, তার অন্যতম কারণও এসব বিদ্যুৎচালিত যানবাহন। দেশজুড়ে প্রায় ৫৫ লাখ এসব যানবাহনের ব্যাটারি অবৈধভাবে চার্জ দিতে গিয়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। উচ্চ আদালত দেশের মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ধীরগতির ত্রিচক্রের যানবাহন চলাচল বহু বছর আগে নিষিদ্ধের নির্দেশ দিলেও তা প্রতিপালিত হয়নি। ২০১৪ সালে উচ্চ আদালত ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে এবং ২০২১ সালে অটোরিকশা বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধের নির্দেশনা দেন। উচ্চ আদালত একাধিকবার এসব যান চলাচলের নির্দেশ দিলেও সরকার তা গ্রাহ্য করেনি। এর কারণ হচ্ছে, এগুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দলীয় নেতাকর্মী। এলাকাভিত্তিকভাবে এগুলো চালানোর অনুমতি দিয়ে তাদের চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেয়া হয়। এতে একদিকে যেমন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, তেমনি দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপচয় হয় এবং এখনো হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ বিভিন্নভাবে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয়। উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৩০ ভাগ অপচয় ও সিস্টেম লস হয়। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, সাধারণত উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ থেকে ১২ ভাগ সিস্টেম লস হতে পারে। এ হিসাবে, দেশে তার প্রায় তিনগুণ বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। চলমান যে লোডশেডিং তা এই অতিরিক্ত লসের কারণেও হচ্ছে। পতিত স্বৈরাচারী সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বললেও প্রকৃত চিত্র কি, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। বছরের পর বছর এ খাতে বিনিয়োগের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলেও সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। বরং বিভিন্নভাবে বিদ্যুৎ চুরি ও সিস্টেম লসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের সুবিধা দিতে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ না করে চালু রেখেছে। এসব যানবাহন এখন সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পরও রাজধানীর যানজট না কমার কারণ যে এসব ত্রিচক্রযান, তাতে সন্দেহ নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, তার পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীসহ সড়ক-মহাসড়কের তীব্র যানজট। রাজধানীর যানজট বহাল রেখে স্বপ্ন পূরণ হবে না। যানজটে অর্থনীতির চাকা যেমন গতিহারা হয়ে পড়ছে, তেমনি মানুষের বিরক্তির কারণও হচ্ছে। যাতায়াতের প্রতিবন্ধক ক্ষতিকর ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। রাজধানী ও সড়ক-মহাসড়ক গতিশীল করতে এর বিকল্প নেই। এগুলো বন্ধের ক্ষেত্রে অনেকে মানবিক কারণ দেখিয়ে যুক্তি দাঁড় করায়। অথচ এখানে মানবিক কারণ দেখানোর সুযোগ নেই। যারা এসব যানবাহন চালায়, তারা একেক সময় একেক কর্মে নিয়োজিত হয়। এটা তাদের স্থায়ী কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা নয়। এগুলো বন্ধ করে দিলে তারা অন্যত্র কর্মসংস্থান করে নিতে পারবে। এ প্রেক্ষাপটে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে এসব যানবাহন বন্ধ করে দিতে হবে। জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। ট্র্যাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে তাদের দায়িত্ব পালনে অনীহা ও গাছাড়া ভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ ধরনের আচরণ করার সুযোগ নেই। তারা বেতন-ভাতা নেবেন, অথচ দায়িত্ব পালন করবেন না, এটা হতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে যানজট নিরসনে যেসব বাধা রয়েছে, তা নিরসনে কঠোর মনোভাব দেখাতে হবে।