ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে

নজর দেয়া দরকার বাজার ব্যবস্থাপনায়
নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে

নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মূল্যস্ফীতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। শুধু হাসিনার সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী ছাড়া বাদবাকি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। এই অবমাননাকর ও কষ্টকর জীবন থেকে মুক্তির প্রহর গুনছিলেন দেশবাসী। সাধারণ মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেই মুক্তি ধরা দেয় ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পতনে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এক মাসের বেশি সময় হলো দেশ পরিচালনার ভার নিয়েছে। দেশের সবকিছু ধ্বংস করে ভারতে পালানো হাসিনার অপকর্মের জঞ্জাল পরিষ্কার করা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুদায়িত্ব বর্তেছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে। কিন্তু এ সরকারের চলার পথ মসৃণ নয়। এখনো হাসিনার প্রেতাত্মারা পদে পদে বাধার সৃষ্টি করছে, যা খালি চোখে দৃশ্যমান। সঙ্গত কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের সুশাসনের সুফল পেতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। তবে এ কথাও মনে রাখা আবশ্যক, কিছু বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় জরুরি। এর মধ্যে সবার আগে দরকার নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় করা এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনা। যদিও বর্তমান সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবু নিত্যপণ্যের বাজার এখনো স্থিতিশীল হয়নি। যেমন, ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ভারত থেকে দুই লাখ ৩১ হাজার ৮০০টি ডিম আমদানি করেছে সরকার। পর্যায়ক্রমে আরো আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। কিন্তু ডিম আমদানির পরও দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়েনি। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজন-প্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ডিমের দাম। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফার্মের সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। গত সপ্তাহে এসব ডিম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে ডিম হচ্ছে গরিবের আমিষের অন্যতম উৎস। শুধু ডিম নয়, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ ও ব্রয়লার মুরগি। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ও আলু আমদানিতে শুল্ক কমালেও এর সুফল দেখা যায়নি বাজারে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্য দুটি। পরিণতিতে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। পতিত হাসিনার আমলে নিয়মিত বাজারে নজরদারি না থাকায় কিছু মুনাফাখোর ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। এখনো সেই বাজার-ব্যবস্থাপনা থেকে বের হওয়া যায়নি। সবার প্রত্যাশা ছিল- স্বৈরাচারীর পতন হলে সবকিছুর দাম কমবে; কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গত এক মাসে জিনিসপত্রের দাম সাধারণের কাছে সহনীয় করতে পারেনি সরকার। তবে আমাদের এ কথাও মনে রাখা দরকার, মাত্র এক মাস বয়সি একটি সরকার মুহূর্তে সব ঠিক করে ফেলবে- তা আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। এ জন্য যৌক্তিক সময় প্রয়োজন। তবে কোনোভাবে তা মাসের পর মাস হতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনপ্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। তার মানে এই নয় যে, এক লহমায় দেড় দশকের বঞ্চনা দূর হয়ে যাবে। আমাদের আশা, যে আন্তরিকতা নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকার দেশ পরিচালনা করছে, তাতে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় হবে। এজন্য বাজার-ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি করবে সরকার। তা না হলে সাধারণের কাছে এ সরকারের যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাতে ভাটার টান শুরু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত