যেহেতু শিক্ষা চলমান প্রক্রিয়া এবং নিত্য নতুনকে উদ্ভাবন করাই এর কাজ, সুতরাং সময়ের সাথে সাথে শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হয়, করতে হয় পরিমার্জন-পরিবর্ধন। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে মানুষের জীবন-জীবিকা বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির উত্তোরোত্তর উৎকর্ষের সাথে সাথে মানুষের অভিযোজনের বিকল্প নেই সত্য; কিন্তু শুধু প্রযুক্তি ও প্রযুক্তনির্ভর জীবিকার সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে যদি মানুষ ক্রমাগত মনুষ্যত্ব ও মানবিক সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে তবে শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অসংগত নয়। অভিযোগ উঠছে যে, প্রযুক্তি ও আধুনিকতার মলাটে আমাদের পাঠ্যক্রমে ধর্ম ও নৈতিকতার পাঠকে ক্রমাগত সংকুচিত করা হচ্ছে। পাঠ্যসূচিতে ধর্ম ও নৈতিকতার কিছু পাঠ সংযুক্ত রয়েছে বটে, কিন্তু বাস্তবতায় এসব নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটছে না বরং দিনকে দিন কিশোর গ্যাং কালচার বিস্তৃত হচ্ছে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো লেজুড়ভিত্তিক রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল ও অপরাধকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে, পুরো সমাজ অসহনশীল হয়ে উঠছে।
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি আমাদের শিক্ষা আলোচনায় নতুন বিষয় নয়। কিন্তু ‘নৈতিকতার শিক্ষা’র পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থায় সুশাসন ও শুদ্ধতারও একটা ব্যাপার রয়েছে। অর্থ্যাৎ ‘নৈতিকতার শিক্ষা’র সাথে সাথে ‘শিক্ষার নৈতিকতা’র বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিনব ভাবনার পথিকৃৎ ছিলেন ভারতবর্ষের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, প্রথম ভারতীয় আইইএস (ইন্ডিয়ার এডুকেশন সার্ভিস) অফিসার খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা। তিনি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে জীবিকা অর্জনের চেয়ে মনুষ্যত্ব অর্জনে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। ১৯১৫ সালে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা দার্জিলিঙ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অচ্যুতনাথ অধিকারী সহযোগে ‘টীচারস্ ম্যানুয়েল’ রচনা করেন, যা বাংলা ভাষায় শিক্ষক প্রশিক্ষণবিষয়ক গ্রন্থের ‘উৎসগ্রন্থ’।
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা একজন শ্রেণিশিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে যেমন পাঠদানের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তেমন শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থার নিবিড় নিরীক্ষণের সুযোগ লাভ করেছিলেন। এছাড়া শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন, ভারতবর্ষের শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগের নানা কমিটিতে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেটে, শিক্ষা উন্নয়নবিষয়ক নানা গ্রন্থে এবং অবিভক্ত বাংলা ও আসামের জনশিক্ষা বিভাগের শীর্ষস্থানীয় পদে দায়িত্বপালনকালে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতিকে প্রতক্ষ্যভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুবিধ সংস্কারও করেছিলেন। সেসব অনেক বড় প্রসঙ্গ বিধায় এ লেখায় তার শিক্ষাদর্শনের শুধু ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়টির অবতারণা করা হয়েছে, যা বর্তমান শিক্ষা সংস্কার পর্যালোচনায় প্রাসাঙ্গিক।
শিক্ষার উদ্দেশ্য : খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার মতে, ‘মনুষ্যত্ব লাভ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। মনুষ্যত্ব লাভ করিতে হইলে শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক- এই ত্রিবিধ বৃত্তির সম্যক্ অনুশীলন আবশ্যক। শরীর মন ও আত্মা প্রত্যেকেরই পুষ্টিসাধন হইলে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষাপদবাচ্য হয়।’ তিনি মনে করেন ‘বিচারশক্তির পুষ্টিসাধন’ শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। ছাত্রত্ব ও মানবত্ব এই উভয়ের মধ্যে মানবত্ব অর্জনই শিক্ষার লক্ষ্য বলে তিনি মনে করেন। তিনি লিখেছেন, ‘উদ্দেশ্যহারা হইয়া কার্য করিও না- শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য- মানবত্ব।
ছাত্রত্ব মানবত্বের অন্তর্গত। যে সুমানব সে সুছাত্র; কিন্তু যে সুছাত্র সে সুমানব না হইতেও পারে।’ ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশনেও তিনি প্রায় একই কথা বলেন- ‘A fine man is always better than a fine certificate.’ তৎকালীন বাঙালা সরকার শিক্ষানীতির থিম হিসেবে এই বাক্যটিকেই গ্রহণ করেছিলেন। টীচারস্ ম্যানুয়েলে তিনি লিখেছেন, ‘জ্ঞানলিপ্সাকে বর্দ্ধিত করিয়া মানসিক শক্তিকে পরিচালনা করাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। ...যে জ্ঞান শক্তিসঞ্চার না করে, সে জ্ঞান নিরর্থক। যে পর্যন্ত মানসিক শক্তি পরিপুষ্ট না হয়, সে পর্যন্ত জ্ঞান কার্যকর হয় না।
শুধু স্মৃতিশক্তির পুষ্টিসাধনেই মানবত্বের পূর্ণতা জন্মে না’।
আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতি ‘শিক্ষার্থীকে জীবিকা অর্জনের উপযোগী যোগ্য, সৃষ্টিশীল মানবিক মানুষে পরিণত করা এবং পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষার উদ্দেশ্য’ হিসেবে স্থির করেছে। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা জীবিকা অর্জনের বিষয়টিকে উপেক্ষা করেননি তবে জীবিকা অর্জনের উপায়টিকে সততার ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে উপদেশ দিয়েছেন। তার মতে, ‘বিদ্যা অর্থকরী হোক, তাহাতে কোনো আপত্তি নেই। অর্থ ব্যতীত সংসার যাত্রা অসম্ভব। বিদ্যার্জ্জন করিয়া সেই বিদ্যাবলে সৎপথে থাকিয়া অর্থোপার্জ্জন কখনও গর্হিত কার্য হইতে পারে না। কিন্তু যদি অর্থই বিদ্যালাভের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তবে একথা বলিব যে, বিদ্যার মর্যাদা লাঘব হইল।’
যান্ত্রিকতা বনাম বিচারশক্তি : সম্প্রতি আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে যে, চলমান শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ডিভাইসমুখী হতে উৎসাহিত করছে যেখানে তাত্ত্বিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। সন্দেহ নেই, জ্ঞান মানুষকে দক্ষ করে। কিন্তু দক্ষতার অভ্যন্তরে যদি তত্ত্ব বা বিচারশক্তি না থাকে, তবে শিক্ষার্থীরা স্বাধীন চিন্তাশক্তির ক্ষমতা হারাবে। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা শত বছর আগে বিষয়টিকে সহজ উদাহরণে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- ‘গ্রামোফোনের গান অতি সুন্দর; কিন্তু উহাকে কেউ সুগায়ক বলে না। চৈতন্যহীন যন্ত্র চালাইয়া দিলে উহা নির্দিষ্ট কয়েকটি গান উদ্দ্গীরণ করিতে পারে। যে বালক নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর শিক্ষা করিয়াছে, তাহাকে শিক্ষিত বলা যায় না; নির্দিষ্ট পথ ছাড়িয়া একটু সরিয়া পড়িলেই সে একেবারে হতবুদ্ধি হয়, কারণ তাহার বিচারশক্তির পুষ্টি হয়নি- সে স্বাধীন ও নির্ভুল চিন্তা করিতে শিক্ষা করেনি।’
শিক্ষার সুশাসন : শত বছর আগে যখন ‘সুশাসন’ শব্দটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি সেই সময় তিনি ‘শিক্ষায় সুশাসন’কে প্রায়োগিক বাস্তবতায় গ্রহণ করেছিলেন। ‘টীচারস্ ম্যানুয়েল’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘সুশাসন গুণে ছাত্রগণ নিয়মানুবর্ত্তী, মনোযোগী ও কর্তব্যপরায়ণ হয় এবং বিদ্যালয়ের বিধান ও শৃঙ্খলা সাধিত হয়।’ শিক্ষায় সুশাসনের উদ্দেশ্য চিহ্নিত করতে গিয়ে গিয়ে বলেছেন- ‘সদাচার অর্জ্জন ও কদাচার বর্জ্জন সুশাসনের উদ্দেশ্য। সুশাসন চরিত্র গঠনে সহায়তা করে ও বিশৃঙ্খলা, অনবধানতা ও অলসতা দূর করে। ...ছাত্রকে আত্মশাসনে সক্ষম করাই শাসনের উদ্দেশ্য।’
শিক্ষকের কর্তব্য ও নৈতিকতা : খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার মতে, ‘শিক্ষকের তিনটি কর্তব্য- সুশিক্ষা, সুব্যবস্থা এবং সুশাসন’। তিনি মনে করেন, ‘শিক্ষক সুশিক্ষিত, সুব্যবস্থাপক ও সুশাসক হইতে না পারিলে কখনও প্রতিষ্ঠালাভ করিতে পারেন না’। শিক্ষকের ‘বিষয়জ্ঞান, প্রণালীজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার’ পাশাপাশি কিছুসদগুণ যেমন- ‘উদযোগিতা, প্রবৃত্তি ও আগ্রহ, শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি, হৃষ্টচিত্ততা, শাসনক্ষমতা, শিক্ষাকৌশল ও উপস্থিতবুদ্ধি’র কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। কুমার যেমন সুনিপুণ হাতে নরম মাটিকে শৈল্পিক পাত্রে রূপান্তর করেন শিক্ষক তেমনি কোমল শিক্ষার্থীকে সুমানবে রূপান্তর করেন। তার মতে, ‘শিক্ষক যেন ছাত্রহৃদয়ের রাজা। ছাত্রহৃদয়ের বিভিন্ন বৃত্তিগুলো যেন তাহার প্রজা। প্রজাগণ যেন বিপদগামী না হয়। .. কোন দোষ যেন অভ্যাসগত না হয়- উৎপত্তিতেই উহার বিনাশসাধন অবশ্য কর্তব্য। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপার লইয়া মনুষ্যচরিত্র গঠিত। অতএব, দোষ সামান্য হইলেও উপেক্ষণীয় নহে।’
শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের সামগ্রিক দায় তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর না চাপিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকেও দায়ী করেছেন। তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীদের চারিত্রিকভিত্তি শিক্ষকের চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। ‘শিক্ষক স্বয়ং চরিত্রবান হইবেন।... যে শিক্ষক অলস, তাহার ছাত্র কিরূপে কর্মী হইবে? যাহার সময়ে নিষ্ঠার অভাব, তাহার ছাত্র কিরূপে সময়ের সদ্ব্যবহার করিবে? যিনি নিজে উচ্ছৃঙ্খল, তাহার ছাত্র কিরূপে সাধু হইবে? তিনি শিক্ষকের সাথে অভিভাবকের ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ‘পবিত্র গৃহে পবিত্র শিক্ষা হয়, পবিত্র ভাব হৃদয়ে উৎপন্ন ও পুষ্ট হয়। অতএব সর্ব্বপ্রযত্নে গৃহের পবিত্রতা রক্ষা করিতে হইবে।...যদি বিদ্যালয় ও গৃহে পরস্পর বিরোধী সম্বন্ধ হয়, যদি শিক্ষক ও অভিভাবকে প্রীত ও একপ্রাণতা না থাকে তবে সুশিক্ষা ও চরিত্রগঠন অসম্ভব।’
শিক্ষক সমিতি ও ছাত্রসংঘ : এখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে নানা ধারায় বিভক্ত নানা শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনগুলো কেবল নিজেদের অধিকার ও দাবি আদায়ের আন্দোলনে ব্যস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সাদা, নীল, লাল ইত্যাদি দলে বিভক্ত। তারা গবেষণা-প্রেষণায় শিক্ষা উন্নয়নের উদ্যোমী না হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৎপর। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক শিক্ষক সমিতির কথা বলেছিলেন, তবে তা বর্তমান সাংগঠনিক চর্চার বিপরীত ধারণা। তার মতে- ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে’ শিক্ষকদিগের একটি সমিতি থাকিবে। তাহারা প্রতিমাসে শিক্ষা-প্রণালী শাসন সংরক্ষণ সম্বন্ধে আলোচনা করিবেন। শিক্ষকগণ স্ব স্ব শিক্ষনীয় বিষয় অবলম্বন করিয়া প্রবন্ধ লিখিবেন এবং সমিতি সমক্ষে আলোচনা করিবেন।’ শিক্ষক সমিতির পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংঘের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু সেটিও নিজেদের দাবি আদায়ে তৎপর শিক্ষক সমিতির মতো গতানুগতিক দাবি আদায়ে তৎপর ছাত্রসংঘের মতো নয়। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ‘বিশ্বাসী, কর্ম্মঠ, সচ্চরিত্র ও আগ্রহবান’ শিক্ষার্থী নিয়ে ছাত্রসংঘ স্থাপনে পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, ‘বংশের যেমন মর্যাদা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও তেমন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরব ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে ছাত্রসংঘ কাজ করবে।’ তিনি ছাত্রসংঘের প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন- ‘সাবধান, যেন কোনো কার্য স্কুলের কলঙ্ক না হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাসগুলো শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণে তিনি গুরুত্বারোপ বলেছেন, ‘হোস্টেলগুলোকে অবশ্যই সুনিয়ন্ত্রিত হতে হবে। ...ছাত্রনিবাস সুপরিচালিত না হইলে দুষ্ক্রিয়ার আবাস ভূমিতে পরিণত হয়।’
ধর্ম শিক্ষা ও চরিত্র গঠন : শিক্ষার নৈতিকতা বা নৈতিক শিক্ষা বিশ্লেষণে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা যে বিষয়ের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন তা হচ্ছে ধর্মশিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন। তার মতে ‘জীবনের বিভিন্ন কর্তব্য সম্পাদনের জন্য মানবের চরিত্রগঠন যে অতীব মূল্যবান তাহা অন্যান্য যাবতীয় দেশে অবিসংবাদিত সত্যরূপে গৃহীত হইয়াছে। জ্ঞানাভাব প্রযুক্ত এই দেশের অধিকাংশ লোক অধঃপতিত। ইহাদিগকে উন্নত করিয়া প্রকৃত মনুষ্যপদবাচ্য করিবার জন্য ধর্ম এবং নীতিশিক্ষা প্রয়োজন। ...ধর্ম এবং নীতিকে বিদ্যালয়ের সাধারণ পাঠ্য বিষয়ের অঙ্গসরূপ মনে করিয়া শিক্ষার ব্যবস্থা না করিলে কখনই যুবকগণের শিক্ষা সম্পূর্ণ হইতে পারিবে না। গুরুজন এবং শাসকসম্প্রদায়ের প্রতি বর্তমানে চতুর্দিকে অসন্তোষ, অবিশ্বাস এবং অশ্রদ্ধার ভাব ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে; তাহার প্রতীকারকল্পে যথাবিহিত উপায় অবলম্বনের বিশেষ প্রয়োজন অনুভূত হইতেছে। এই স্রোতের প্রতিরোধ করিতে হইলে প্রথম হইতেই ছাত্রগণের চরিত্রগঠনের নিমিত্ত সকল এবং সুপ্রশস্ত ভিত্তিস্থাপন অতি প্রয়োজনীয়; তবে তাহার উপর মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির সুরম্য এবং সুদৃঢ় সৌধ নির্মাণ সম্ভবপর হইবে।’
তার মতে ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা পূর্ণ হয়ে ওঠে- ‘যে শিক্ষা মানবমনে সর্ব্বমঙ্গল ধারা করুণাময় সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে অন্ততঃ কিছু না কিছু ধারণার উদ্রেক করে না, তাহাকে কখনোই পূর্ণ শিক্ষা বলা যায় না। শারীরিক, মানসিক এবং নৈতিক সর্বপ্রকার শিক্ষাকেই ধর্মশিক্ষার সাহায্যে পরিপূর্ণতা দান করা প্রয়োজন।’ গতানুগতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা প্রশ্ন তুলেছেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পাইতেছে বহুলোক; কিন্তু মানুষ হইতেছে কয়টি?’