ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যান্ত্রিক যুগে গাড়িমুক্ত দিবসের গুরুত্ব

অলোক আচার্য
যান্ত্রিক যুগে গাড়িমুক্ত দিবসের গুরুত্ব

পৃথিবী পুড়ছে কার্বন বৃদ্ধিতে। আর এর জন্য দায়ী অনবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। অর্থাৎ তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো শক্তির ব্যাপক ব্যবহার কার্বন নিঃসণের জন্য প্রধানত দায়ী। আর এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এই যে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে বা আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব তার পেছনে কিন্তু এসবই দায়ী। আমরা বিলাসী জাতি। উন্নত দেশে গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার সব বয়সিদের কাছে জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে তেল, গ্যাসের ব্যবহার। সামান্য দূরত্বেও আমরা গাড়ি ব্যবহার করি। মোটরসাইকেল তো এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতেও ব্যবহার করছি। অথচ বিশ্বকে গাড়িমুক্ত রাখার জন্য একটি দিবস আলাদা আছে। ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। গাড়ি বিলাসিতা এবং প্রয়োজনীয় একটি বাহন। কিন্তু কতটা বিলাসিতা এবং কতটা প্রয়োজনীয় তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। প্রয়োজনের চেয়ে বিলাসিতার ভূত আমাদের মাথায় চেপে বসেছে। দিবসটি পালনের বহুমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা, জীবাশ্ম জ্বালানীমুক্ত বাহন যেমন-সাইকেল এবং পায়ে হাঁটা উৎসাহিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সর্বোপরি নগরকে যানবাহনের জট থেকে বাঁচিয়ে মানুষকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করা। পায়ে হাঁটাকে ডাক্তারি ভাষায় একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হিসেবে পরামর্শ করা হয়। সাত-সকালে উঠে মর্ণি ওয়াকের বদলে যদি হেঁটে অফিসে যাওয়ার অভ্যাস করি বা বাজার হাতে বাসায় ফিরি তাহলেই কিন্তু কাজ হয়। অথচ তা আমরা করি না। কারণ তাতে আমাদের মান-সম্মানে আঘাত করতে পারে! হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরা অনেকের কাছেই লজ্জার ব্যাপার! এজন্য তারা গাড়িতে চড়েন। গাড়িতেই তাদের বিলাসী জীবন। এই বিলাসী জীবনেরও দুর্ভোগ রয়েছে। সে নিজে দুর্ভোগ পোহায় এবং অন্য মানুষও সেটা ভোগ করে। নানা কারণে বর্তমান বিশ্বের জন্য এই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বৃদ্ধিই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য। কেউ গাড়ি একবারে ছাড়তে বলেনি। কারণ গাড়ির দরকার আছে। ব্যক্তিগত গাড়িও দরকার। তবে তা কখন দরকার আর কখন বিলাসিতা সেটি তো বুঝতে হবে। সারা পৃথিবীতেই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। জীবন যাত্রা সহজ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বিলাসিতার মাত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামান্য দূরত্বেই আমরা হাঁটতে অথবা সাইকেল চালিয়ে যেতে অনিচ্ছুক। এই বিলাসিতার কারণে আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতা কমছে। প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন শহরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। ঢাকা শহরের ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখলেই ধারণা পাওয়া যায় কি হারে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আমাদের প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ। এই গাড়ির পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানী তথা কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা। এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘনিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার প্রভাবজনিত বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মারাত্বকরুপে প্রত্যক্ষ করছে ফলে নতুন করে প্রচারের দরকার নেই। অথচ উন্নত বিশ্বে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমছে। তারা অল্প দূরত্বে সাইকেল ব্যবহার করছে। অর্থাৎ তাদের ফুটানিটা কম, স্বাস্থ্য সচেতনতা বেশি। আমাদের উল্টো চিত্র। গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণ, পার্কিং সমস্যা, যানজট ইত্যাদি। যেহেতু শহরে গাড়ির সংখ্যা বেশি, তাই সমস্যাগুলোও শহরেই বেশি। ১৩০ বছর আগে, প্রথম গাড়ি আবিষ্কৃত হয়েছিল। গাড়ি শিল্পের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিও ঘটতে থাকে দ্রুত। দ্রুততম সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছানোর অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয় মোটরগাড়ি। মানুষ তাড়াতাড়িই গাড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বর্তমানে গাড়ির মালিকদের একটা বড় অংশ একা গাড়ি চালিয়ে অফিসে যাতায়াত করেন। আর প্রতিদিন গাড়ির মালিকদের একটা অংশ ভাগাভাগি করে রাইড শেয়ার অন্যদের সঙ্গে আফিসে যেতে ইচ্ছুক। বড় শহরে আজকাল গাড়ি ছাড়া বাইরে যাওয়া একটু অসুবিধাজনক, এটা সত্যি কথা। কোনো কোনো স্থানে গাড়ি সহজে চলাচল করতে পারে কিন্তু সাইকেল বা ধীরগতির অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে গাড়িমুক্ত দিবসের গুরুত্ব কোথায়? সামান্য দূরত্বে চলতেই যারা গাড়ি ব্যবহার করছেন তারা যে কিছুদিন পরেই নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন সেটাও তো মাথায় রাখতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত