অভিমত

শিশুকে গড়ে তোলা

তানভীর হাসান তপু

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

যে কোনো শিশুর হাতের লেখা শুরুতে আঁকিবুকিই থাকে। এর পর তার হাতে বর্ণমালা স্পষ্ট হতে শুরু হয় সাধারণত পাঁচ বছর বয়স থেকে। সমস্যা হলো, আমাদের অধিকাংশ কারিকুলামে শিশুর প্রথম পাঠ বর্ণমালা। আর বর্ণমালার আধিক্য থাকায় তারা অধিকাংশ সময় লেখাপড়ায় আনন্দ অনুভব করে না। ফলে লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। দুই বছরের শিশু প্রাথমিকভাবে প্রথমে বিভিন্ন বস্তুর নাম বলে বা চিহ্নিত করে থাকে। এজন্য অনেক সময় নাম না বলতে পারলেও কিছু জিনিস চিনতে শেখে। অভিভাবকদের সঙ্গে এজন্য শিশুর সখ্যতা বাড়ানো জরুরি। তাদের সঙ্গে থাকলে এবং অনুকরণ করে তারা অনেক জিনিস চিনতে ও নাম বলতে শেখে। তিন বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ছোট ছড়া, গান, অভিনয় ও আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা শুরু করতে পারলে ভালো হয়। যৌথ পরিবারে তাই শিশুর কিচ্ছা-কাহিনী শুনিয়ে সৃজনশীল দিকে আগ্রহী করতে হয়। এ বয়সে শিশুরা রঙিন ছবিযুক্ত বই নাড়াচাড়া করতে ভালোবাসে। এভাবে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত করতেই ছবি দেখিয়ে পরিচিত জিনিসের নাম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়। ফলে চারপাশের পরিবেশের বাস্তব জিনিস দেখিয়ে ধারণা দেয়া যেতে পারে। পরিবেশের রং, ফুল-ফল, গাছ, তরকারি, ঘরের আসবাব, দৈনন্দিন সামগ্রীর নাম শেখানো যেতে পারে। সাধারণত শিশুরা যে কোনো ছন্দ সহজেই মনে রাখতে পারে। তাই তাদের ভালো লাগার জন্য ছন্দের সুরে, তালে তালে তাদের সহজেই যে কোনো বিষয় জানানো সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে শিশুদের নৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে বাস্তবতার আলোকে জানানো যায়। তবে ছন্দের ব্যবহার বিষয়ে আমাদেরই আগ্রহ অনেক কমে গেছে। অভিভাবকরাও নতুন প্রজন্মের শিক্ষার সঠিক দিক সম্পর্কে অবহিত নন। তারা একাডেমিক কার্যক্রম বর্ণমালায় সীমাবদ্ধ রাখে বিধায় সংকট দেখা দেয়। অপরিপক্ব বয়সে তাদের ওপর পাঠ্যবইয়ের স্তূপ সাজিয়ে দেয়ায় কোনো কাজ হয় না। বরং এর উল্টো প্রভাব দেখা দেয়। সম্ভবত এই ধারণা থেকেই ব্যবহারিকনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। তবে পদ্ধতিটির সমস্যা দ্রুতই ধরা পড়ে। মূলত এই শিক্ষাক্রমে সেসব বিষয়ই রাখা হয়েছে, যেগুলো পরিবারই প্রাথমিকভাবে দিতে পারে। কিন্তু অভিভাবকরা মূলত টেক্সটকে গুরুত্ব দিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। শহরে কিছু কিছু পরিবার এখনও নিয়ম ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহ দেয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরও কাঠামোর ওপর নির্ভর করতে হয়।