গণতন্ত্রের ম্যারাথন যাত্রার নোঙ্গর কতদূর

এ এইচ খান রতন

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ জন্মগতভাবেই আশাবাদী। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লক্ষ্যে পৌঁছানোর ত্যাগ ও সংগ্রামের ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহই কালের সাক্ষী, পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস বা অনুপ্রেরণা। ইতিহাস থেকে গ্রহণ করা শিক্ষা মানুষকে বাস্তব জীবন ও কর্ম সম্পর্কে যতটা জ্ঞান সমৃদ্ধ করে, একাডেমিক আর কোনো শিক্ষা তার সমতুল্য নয়। পেশাগত কর্মজীবনে একাডেমিক সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারন করে বটে; কিন্তু, জ্ঞান ও বিচক্ষণতার সীমানির্ধারনে শিক্ষাগত সনদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিচক্ষণতার ভূমিকা অপরিসীম। যে কারণে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বময় কিংবদন্তি তুল্য প্রবাদ পুরুষরা যুগে যুগে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে, নিজ জ্ঞান, গুণ ও প্রতিভার সমন্বয়ে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, একাডেমিক সনদে নয়।

তথাপি, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

রাজনীতি, সমাজনীতি, কি অর্থনীতি, সকল ক্ষেত্রে ইতিহাস সব্যসাচীর মতো অগ্রসরমান। তাকে সাময়িক বিভ্রান্ত করা গেলেও, কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সত্য, পুনঃপ্রতিষ্ঠায় হাজার বছরের বন্ধুর পথ অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছাতে ইতিহাসই একমাত্র ভরসা। কিন্তু, ইতিহাসের মহাফেজ খানায় রক্ষিত অফুরন্ত জ্ঞান ভান্ডার হতে মানবজাতি জ্ঞান আহরণে বিমুখ; কারণ, মানুষ নগদে বিশ্বাসী। তথাপি, ইতিহাসের মহাফেজ খানাই একমাত্র অক্ষয় দর্পণ, যেখান হতে তথ্য চিহ্নিত করে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার চিত্রআঁকা যায়।

প্রেক্ষাপট, পটভূমি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা অনুষঙ্গ আমাদের সামাজিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জাতীয় জীবনে বিপথগামী সংবিধান পরিপন্থি আন্দোলনের নাম বিপ্লব।

আবার বিপ্লবের সাংবিধানিক বৈধতা না থাকলেও, গণমানুষের দাবির মুখে শাসক গোষ্ঠীর বাধ্য হয়ে দাবি মানার নামই গণপ্রজাতন্ত্র। কারণ জনগণের জন্যে আইন বা সংবিধান, সংবিধানের জন্যে জনগণ নয়।

যাদের উদ্দেশ্যে উপরের কথাগুলো বলা, তারা আমাদের দেশের রাজনীতির মাঠের রথী-মহারথী। অর্ধশতাব্দী ধরে একটা জাতিকে আরব্য রজনীর আলিফ-লায়লার গল্প আর আলো তুমি আলেয়া’র স্বপ্ন দেখিয়ে যারা ভুল পথে পরিচালিত করছে। অথচ, কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের সর্ঘ রাজ্যের ঠিকানা জনগণের কাছে আজও অধরা। বাংলাদেশের প্রায় সমসাময়িককালে স্বাধীনতা লাভ করে, বিশ্ব দরবারে মজবুত গণতন্ত্র ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিতের উপর সম্মানের সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া দেশ দুটি, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। অপরদিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশবাসীকে বলির পাঠা বানিয়ে, ক্ষমতার দণ্ড মুণ্ডে জগদ্দল পাথর হয়ে বসে আছে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তুলনামূলক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে গেলে, একটা জাতিকে মর্যাদার প্রশ্নে আর্জাতিক প্লাটফর্মে কোন পর্যায়ে নিয়ে দাঁড় করাতে পারে, দেশ দুটি তার উদাহরণ।

আধুনিক বিশ্বায়ন বা এর যুগে, প্রতিটি মানুষ, কোনো না কোনো দিক হতে বিশ্ব নাগরিক। সুতরাং, বিশ্ব দরবারে একজন নাগরিকের মর্যাদানির্ভর করে আর্জাতিক মানদ-ের বিভিন্ন সূচকে তার নিজ দেশের বা সামাজিক নিরাপত্তাজনিত অবস্থানের উপর, ব্যক্তিগত আর্থিক স্বচ্ছলতার মাপ কাঠিতে নয়।

তেপ্পান্ন বছর আগে পাকিস্তনি সামরিক শাসনের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ভূমিষ্ট বাংলাদেশ, টিনএজ পেড়িয়ে বহু আগেই পরিণত। অথচ, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা; কিন্তু ও কেনোর মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছি। শৈশব, কৈশোর ও যৌবন পেড়িয়ে উপরোল্লিখিত চারটি দেশের অন্তত দু’টির সাথে আর্জাতিক মানদ-ের কোনো সূচকেই আমদের অবস্থান তাদের ধারে-কাছে নেই। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার উদাহরণ না হয়ে আমরা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের নেতিবাচক পর্যায়ে আছি।

সোশ্যাল মিডিয়া, চায়ের আড্ডা, পত্রিকার পাতা, গোলটেবিল বৈঠক, সভা-সমাবেশ, সর্বত্র আমাদের আলোচনার উপাদান, ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের বিধ্বস্ত চিত্র! সুতরাং, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতে আমাদের জাতীয় অর্জন কি, বারবার এ প্রশ্ন সামনে আশা স্বাভাবিক।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিজ্ঞানীদের চন্দ্র জয়ের সফলতায়, জনগণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস যখন, বিশ্ব মিডিয়ায় আছরে পড়ে, আমাদের মিডিয়া তখন, দ্রব্য মূল্যের সিন্ডিকেটের কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাসের খবর ছাপে।

তুরস্ক ২৫ হাজার প্রকৌশলীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঋরঃয এবহবৎধঃরড়হ ফাইটার জেট আকাশে উড়িয়ে যখন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়; আমরা তখন নরম বিছানায় গা এলিয়ে রিমোট হাতে আয়েশি ভঙ্গিতে কফির পেয়ালায় চুমুক দেই আর রাজনৈতিক সহিংসতায় জনগণের করের টাকায় জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের ফুটেজ দেখি।

অর্ধশতাব্দী পেরোলেও দেশের অর্জন বিসর্জনের হিসাব মেলাতে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটরও ডিজিট ফেল করে। প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন ও দুর্নীতির সামগ্রিক তুলনামূলক খতিয়ানের গ্রাফ দাঁড়ায়; গাণিতিক হারে উন্নয়ন, জ্যামিতিক হারে দুর্নীতি, আর বাণিজ্যিক হারে পরিকল্পনাহীন প্রকল্প বাস্বায়ন। উন্নয়নশীল এ দেশের জনসাধারণের মাথার উপর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা চাপিয়ে, উন্নত দেশের তালিকায় স্থান করে নেয়ার ঘোষণা যতটা না বাস্তব, তার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ জনগণের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করা ও নীতিনৈতিকতা সম্পন্ন মেধাভিত্তিক প্রজন্মের বাস্তবায়ন। যেখান থেকে আমাদের অবস্থান বহুদূর।

জীবনভিত্তিক বহুবিধ সূচকে দিনশেষে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির চাপ, আজ ভূমিষ্ট শিশুটির ন্যাপকিন হতে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধের হাতের লাঠিসহ ১৮ কোটি মানুষের মাথার উপর। কাজেই ঋণ করে ঘি খাওয়ার প্রবাদ আমাদের জন্য নয়। জনগণের মাথার উপর অতিমাত্রায় বৈদেশিক ঋণের চাপ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি মূল্য পরিশোধ জাতীয় জীবনে মূল্যস্ফিতির অন্যতম কারণ।

এ অবস্থা হতে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়, সম্ভাব্য উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

প্রশ্ন হলো, জনগণের কাঙ্ক্ষিত জীবনমান বাস্তবায়নের নামে মুলা ঝুলানো গণতন্ত্র আর কত কাল? অধিকার বাস্তবায়নের স্বপ্নযাত্রা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তাহলে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কি উপায়ে বিস্ফোরিত হতে পারে, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলন তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ বহুধা বিভক্ত হয়ে যাদের হাতে প্রায় হাজার খানেক প্রাণ ও কয়েক হাজার কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ ধ্বংস হলো, তারা কি কারণে হঠাৎই এমন মারমুখী হয়ে উঠল? রাজনৈতিক দাবি আদায়ের নামে, অগ্নিসন্ত্রাস করে গদি দখলের স্বপ্ন তো আর সকলেই দেখে না। মূলত: স্বাভাবিক জীবনযাপনের চাপে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল? এবারের আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছে সকলেই আওয়ামী লীগবিরোধী নয়, তবে রাজনীতি সচেতন মানুষ তারা। মুক্তিযুদ্ধের পরে আর কোনো আন্দোলনে মা-বাবা সন্তানসহ পরিবারের সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জাতি দেখেছে বলে মনে পরে না। বুকের ভেতরের চাপা যন্ত্রনায় আওয়ামী পরিবারের আজন্ম সমর্থক পরিবারকেও এ আন্দোলনে সমর্থন শুধু নয়, রসদ যোগাতে দেখা গেছে। কারণ কি?

অর্ধশতাব্দীর রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজিই তাদের আকস্মিক ক্ষিপ্র হতে বাধ্য করেছে। কারণ, দুঃখ প্রকাশের প্লাটফর্ম ছিল না। এদেশের জন্মোতিহাস যাদের রক্ত ঘামের ফসল, কতটা আঘাতের পর এমনটা হতে পারে, তা ক্ষমতার ভেতর বাইরে অবস্থান করা সকলেরই ভাবা উচিত। গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে বারংবার প্রতারিত হয়ে অবশেষে মোক্ষম সুযোগের সদ্বব্যাবহার করেছে তারা?

’৭৫ পরবর্তী অস্থিতিশীল সময়ের সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটের হুবহু মিল রয়েছে। ২৩ বছর সংগ্রামের ফসল সামরিক শাসনের শৃঙ্খলমুক্ত গণতন্ত্র, মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় পুনঃশৃঙ্খলিত হলো কেন- কাদের হাতে? প্রতি বিপ্লব কেন হলো না? নিশ্চয় সাদা চোখে তা দেখার বিষয় নয়। বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমাদের সামগ্রিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় আনতে হবে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে, মানুষ কখন আইন হাতে নেয়।

’৭৫ এ হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতারা জগণ্য ও বর্বর হত্যাকাণ্ডে নিমজ্জিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বা প্রতিরোধের বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে, রাজনৈতিক কৌলিন্য বিসর্জন দিয়ে, বঙ্গভবনে হাজির হওয়ার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে একমাত্র তার সঠিক উত্তর পাওয়া সম্ভব। রাতারাতি দল ও বোল পাল্টিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক জাতির পিতা হত্যাকারীদের অবৈধ মঞ্চে কেন তার ঐক্যবদ্ধ হলো? তারা কি বঙ্গবন্ধুকে ভালো বাসতেন না? নিশ্চিত ভালো বাসতেন! তাহলে এমনটি হলো কেন? স্বপ্ন-সাধের গণতন্ত্র যখন স্বৈরতন্ত্রের অবৈধ পিঞ্জরে আবদ্ধ হয়, অনিবার্য পরিণতির সাক্ষী হয়, মানুষের যখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তখনই অধিকার আদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে গঠনমূলক বিরোধিতা করার মতো একটা শক্তিশালী বিরোধী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়ায়। গড়ে উঠে স্বাধীকার আদায় আন্দোলন। বর্তমানে দেশে বিরাজমান পরিস্থিতির দায় সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতালোভী রাজনৈতিকদের।

চিত্রনাট্যের অন্তরালে মোনাফেকের জন্ম কেন ও কখন হয়? এর পেছনে নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার বিশাল দায় থাকে। যা আমরা আবেগের কারণে বিবেক দিয়ে বিবেচনা করি না। কিন্তু, কয়েকটি মাত্র দৃশ্য মঞ্চস্থের পরই ধীরে ধীরে পর্দার অন্তরালের কালো বিড়ালের আবির্ভাব ঘটে। ’৭৫ পরবর্তী রাজনৈতির নাট্যমমঞ্চ এদেশের মানুষ দেখেছে। ন্যাপথ্য নায়কের আত্মপ্রকাশ প্রত্যক্ষ করেছে জাতি। মুখে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ঐশী বাণী শুনিয়ে বহু নাটকীয়তার পর, ৩০ মে ১৯৭৭ জাতির সামনে হাজির করা হয়েছিল হা-না নামে এক ভূতুড়ে নির্বাচন। যেখানে রাজনৈতিক দলের অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল না। রক্তে লেখা সংবিধানের বুকে বন্দুকের নলে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শুরু হয় স্বৈরতান্ত্রিক বাইপাস সার্জারি। প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধান ছিন্নভিন্ন হয়ে স্বৈরাচারের শেকলে বাঁধা পড়ে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে একই পথ অনুসরণ করে জাতির জীবন থেকে আরো ৯টি বছর কেড়ে নেয় আরেক স্বৈরাচার। ইতিহাসের তিমিরাচ্ছান্ন এ সকল পর্বের মাসুল দিয়ে যাচ্ছে জাতি আজও। যার জন্য দায়ী দেশের অসৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

দেশ কেন পিছিয়ে, এ প্রশ্নের উত্তর, ৩০ লাখ প্রাণের কাছে রাজনীতিবিদরাই দিতে হবে। শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, সকল রাজনৈতিক হত্যার নিরপেক্ষ বিচার হওয়া উচিত। কোনো না কোনো উপায়ে হত্যা পরবর্তী সময়ে যারা এর বেনিফিসিয়ারি। যাদের অনেককেই আজও বিচারের মুখোমুখি পর্যন্ত হতে হয়নি বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে সংসদে প্রবেশ করে মন্ত্রিত্বের স্বাদ গ্রহণ করেছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড, সরাসরি হত্যায় জড়িত এবং বেনিফিশিয়ারী কেউ, বিচারের মুখোমুখি না হয়ে রাজনীতির সুযোগ লাভ করেছে বলে জানা নেই। যেটি এদেশের মাটিতে আজও চলমান- এ কারণেই পর্যায়ক্রমে দেশে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন গড়ে উঠেছে প্রতিটি সেক্টরে। মানুষ নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে পেশাগত আয়কে গৌণ ভেবে অবৈধ উপার্জনে গাড়ি, বাড়ি করাকে অধিকার মনে করছে। জনসেবার রাজনীতি হয়ে গেছে গাড়ি-বাড়ি আর স্বপ্ন পূরণের আলাউদ্দিনের চেরাগ।

শক্ত হাতে তাদের বিচার না করে রাজনীতির সুযোগ দেয়ায়, নানান চক্রান্ত্রের সমন্বয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। উন্নয়নের পাশাপাশি মজবুত গণতন্ত্রের প্রত্যাশী জনগণ। দেশে একাধিক রাজনৈতিক দলের দলীয় আদর্শগত মতবিরোধ থাকবে, এটাই গণতন্ত্র। দেশে মজবুত নিষ্কলুষ গণতন্ত্রের প্রত্যাশা সমগ্র জাতির। দ্রুততম সময়ে বৈষম্যহীন রূপকল্প বাস্তবায়নের রোডম্যাপ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে- দেশবাসীর এমনটাই প্রত্যাশা।

হিংসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত শাসক শ্রেণিকে প্রতিহিংসার মাধ্যমে উৎখাত করে জনসাধারণের অধিকাংশের সমর্থনপুষ্ট শ্রেণির রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের নাম সব বিপ্লব, যদি তা গন্তব্যে পৌঁছে। না হয় নৈরাজ্যের নতুন সমস্যা জাতীয় জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

লেখক : কলামিস্ট