ভারতের সাথে সম্পর্ক

নতজানু নীতি কাম্য নয়

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ঢাকা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কর্মণ্ডসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এর আগে একই রকম মনোভাব ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এজন্য তিনি ভারতের কাছে বাংলাদেশ কী ধরনের আচরণ আশা করে তারও আভাস দেন। তিনি শেখ হাসিনাকে চুপ রাখার এবং বাংলাদেশে স্থিতি রক্ষার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন। কাজের সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে সদিচ্ছার প্রকাশ হিসেবে হয়তো আবারো ভারতে ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারতীয় কোম্পানির পাওনা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বস্তুত দুটি প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে অব্যাহত টানাপড়েন কাম্য নয়; বরং সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক কাম্য এবং তা হতে হবে অবশ্যই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে, যা ভারত কখনো অনুসরণ করেনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে, একটি গণবিরোধী স্বৈরাচারী সরকারকে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে এ দেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ নস্যাৎ করে নিজের স্বার্থ পুরোপুরি আদায় করেছে।

এমনকি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হলে, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সে বিজয়ও সহজভাবে নেয়নি ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বটে; কিন্তু একই সাথে ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নানা ছল খুঁজছে। শুধু তাই নয়, দিল্লি এখনো বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষ সম্পর্কে চরম অভব্য বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর একটি মন্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে।’ এর আগেও তিনি একই রকম অশালীন উক্তি করেছেন বহুবার। বাংলাদেশের মানুষকে উইপোকার সাথে তুলনা করেছেন। তাঁবেদার হাসিনা সরকার কখনো প্রতিবাদ জানানোর মতো অবস্থায় ছিল না।

এখন বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝেশুনে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভারত এ দেশে কেবল হাসিনার মতো একটি তাঁবেদার সরকার চায়। আর কোনো বিকল্প ভাবতে পারে না। এ সত্য মাথায় রেখে সম্পর্কের ভারসাম্য নিরূপণ করতে হবে। আর এ ভারসাম্য আনার মূল সূত্র হবে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো। ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা মনে রাখতে হবে।

গত সাড়ে ১৫ বছরে ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে আমাদের আবেগ আহত হয়েছে, মনে বিরূপতা তৈরি করেছে। এ ক্ষত সারানোর দায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নয়; বরং একান্তভাবে ভারতের। কাজটি ভারতের করতে হবে যদি সে দায় বোঝার মতো বোধবুদ্ধি দিল্লির থেকে থাকে। তেমন সদিচ্ছা ভারতের আদৌ আছে কি না বোঝা যাবে আসন্ন জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনের অবকাশে ড. ইউনূসের সাথে তাদের আচরণে। যদি নরেন্দ্র মোদি ড. ইউনূসকে এড়িয়ে যান, বুঝতে হবে বৈরিতার পথে হাঁটছে দিল্লি। ঢাকাকেও সেভাবে তার নীতিগত অবস্থান নিয়ে এগোতে হবে।