ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

ড. মাহবুব হাসান
অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

গত বছরের আগস্টের তুলনায় এ বছর (২০২৪) ভারতের ২৪ শতাংশ রপ্তানি বাংলাদেশে কমেছে। এই তথ্য দিয়েছে ভারতীয় মিডিয়া ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তারা ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। গত বছর এই সময়ে ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি করেছিল ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ বছর ২০২৪-এ তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে। শতকরা হিসাবে কমেছে মাত্র ২৮ শতাংশ। একমাত্র তুলা রপ্তানি করে গত বছর ভারত বাংলাদেশ থেকে ১১১ কোটি ডলার নিয়েছে। তুলা খাতে তাদের রপ্তানি কমেছে মাত্র ১০ শতাংশ। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য জানায় যে, গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের উৎখাতে ছাত্রজনতার গণবিক্ষোভের ফলে তেমন কোনো সংকট হয়নি। দাবি করা হয়েছে যে, তাদের তুলা ও গার্মেন্টস পণ্য আমদানি কমেছে মূলত বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে। দিনে দিনে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হবে না, এই সত্য আমরা জানি। আর সেটি আমরা চাইও না। ধীরে ধীরে ওই রাষ্ট্রটির অপ্রতিবেশীসুলভ দাদাগিরির চাপ কমিয়ে আনবো আমরা। সুপ্রতিবেশী হতে হলে কেমনতর আচরণ ও বন্ধুত্ব দেখাতে হয় তা বিএসএফের মালিক মোদি সরকার বোঝে না। সীমান্ত হত্যাই কেবল বন্ধ করতে হবে না ভারতকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। সত্যই যদি বৈদেশিক মুদ্রার অভাবই মূল কারণ হয়, তাহলে তা তো কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে না বাংলাদেশের। কারণ এর মধ্যেই রেমিট্যান্সের স্রোত লেগেছে। প্রবাসীরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেমিট্যান্স-অস্ত্র ব্যবহার করেছিলে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে। ২০২৪-এর জুলাই মাসে মাত্র ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স তারা পাঠিয়েছিল। আর তার আগের মাসে পাঠিয়ে ছিল ২৬৫ কোটিরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা।

হাসিনা আগস্টের ৫ তারিখ উৎখাত হয়ে পলায়ন করলেই রেমিট্যান্স পাঠানোর গতি বাড়ে। তখন ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকা রিজার্ভ তর তর করে বেড়ে এখন ২৪ বিলিয়নের কোঠায়। অতএব ভারত থেকে পণ্য কেনার গতিও নিশ্চয়ই বাড়বে। এতে মোদি বা ভারতের বিশ্লেষকরা আনন্দিতই হবেন। কিন্তু একটি ব্যাপার ঘটে গেছে ওই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগেই। তা হলো, ভারতীয় মোদি সরকারের হাসিনা-প্রীতিকে তারা পছন্দ করেনি। বহু আগে থেকেই এদেশের মানুষ ভারতের নকল প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, ভারত এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্তে বাংলাদেশের চাষীদের গুলি করে হত্যা করে। সর্বশেষ স্বর্ণা দাস নামে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এসব কারণে এদেশের মানুষ মনে-প্রাণে ভারতকে অপছন্দ করে। কিন্তু শেখ হাসিনা ছিলেন মোদি সরকারের পোষ্য, পেয়ারের লোক। তাই তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে জোড় কদমে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল প্রতিবাদে, প্রতিরোধে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে উৎখাতের জন্য। আমরা দেখেছি, সাধারণ মানুষ ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কোন কোন পণ্য ভারতের, তা চিহ্নিত করে বলছে এগুলো কিনবেন না। আমরা যেমন কোকাকোলা না খাওয়ার জন্য সবাইকে জানাই। কারণ ওই পানীয়ের মূল উৎপাদক ইহুদি। আর যে দেশেরই হোক না কেন, ইহুদিরা টাকা দেয় ইসরায়েলকে, খুনে নেতানিয়াহুর সরকারকে। ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা তাদের নেশা। আর এখন গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বিশ্বের মানবতাবাদীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও। ঠিক একই কারণে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে এদেশের তরুণ-যুবারা। আমি লক্ষ্য করেছি সচেতন মানুষ পণ্য কেনার সময় জিজ্ঞেস করে কোন দেশের এটি। ভারতের শুনলেই বলে না, থাক। কেন ভাই, থাকবে কেন? গত মাসেও তো ওদের প্রোডাক্টই কিনেছেন। এখন আবার কী হলো। উত্তরে ক্রেতা বলেন, তখন অতটা সজাগ ছিলাম না। জানতাম ভারত বন্ধু রাষ্ট্র নয়, কিন্তু আমাদের ঘাটতি আছে বলেই তো সরকার বা ব্যবসায়ীরা ওই দেশের পণ্য আনে। এখন দেশের পণ্য কিনবো, দেখি আমরা কেমন উন্নতি করছি। কিংবা ভিন্ন দেশের পণ্য কিনবো। ভাই, পাকিস্তানি পণ্য দিই? ক্রেতা চোখ গরম করে বলে কেন এমন প্রস্তাব করলেন? পাকিস্তানি পণ্য তো আমাদের দেশে আসেই না। কেনা, না কেনা তো পরের বিষয়। পেঁয়াজ কিন্তু পাকিস্তান, ভারত দু’দেশ থেকেই আসছে। পেঁয়াজের মান ও দাম যার কম ও ভালো হবে, সেই দেশের পেঁয়াজই কিনবো। তবে সব কিছুর আগে বাংলাদেশের পেঁয়াজই কিনবো। দুই টাকা দাম বেশি হলেও, কিনবো। এই হলো নতুন চিন্তাধারা, নতুন করে নিজেদের প্রতি ভালোবাসার লক্ষণ।

লেখক: কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত