ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে সচেতন নাগরিক হিসেবে অনেকেরই ভাবনার শেষ নেই। একটি সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে হলে আমাদের সবাইকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইটা শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। আমাদের চেতনাকেও বৈষম্যবিরোধী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এখানে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে আমাদের কিছু ভাবনা তুলে ধরছি:

বাংলাদেশ থেকে সকল স্তরে বৈষম্য উৎপাটন করতে হলে আমাদেরকে সর্ব প্রথম শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। একই দেশের নাগরিক হয়েও ভিন্ন ভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থার কারণে আমাদের সন্তানরা একে অপরকে ঘৃণা করা শিখছে। একে অপরকে অপছন্দ করা থেকে বৈষম্য করার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। শুধু বৈষম্য করার মানসিকতাই সৃষ্টি হচ্ছে না, বরং বৈষম্য করাটাকেই প্রত্যেক ঘরানার লোক সঠিক বলে মনে করছে। এই ধরনের মানসিকতা একটা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কঠিন অন্তরায়। বৈষম্যের এই বীজ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে না উপড়াতে পারলে আমরা কখনোই একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে পারব না। একজন শিক্ষার্থীর মন-মগজে ছোট্ট বেলা থেকে আলাদা আলাদা চেতনার যে বিষ ঢুকানো হচ্ছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ কাজটি সহজ না হলেও অসম্ভব নয়। কওমি, আলিয়া ও জেনারেল ধারায় কমন যে সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয় তাকে চমৎকারভাবে ঢেলে সাজানো যায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা নিম্নের প্রস্তাবনার আলোকে ঢেলে সাজাতে পারি:

১. প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত জেনারেল, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কমন সাবজেক্ট হিসেবে কুরআন, আরবি, ইসলাম শিক্ষা, বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, আইসিটি ও কম্পিউটার, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ইত্যাদি পড়তে পারে।

২. এই কারিকুলাম রচিত হবে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর চেতনার আলোকে। বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান ইত্যাদি বইয়ের প্রচ্ছদ, ভেতরের কন্টেন্টগুলো অবশ্যই মার্জিত হতে হবে। কোনো ধরনের অশ্লীলতা, বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা পাঠ্য বইয়ে হতে পারবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতার ঈমান ও আমলের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোনো উপাদান পাঠ্য বইয়ে থাকতে পারবে না।

৩. জেনারেল ধারার প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে কুরআন, আরবি ও ইসলামী শিক্ষা নামে ৩০০ মার্কের ৩টি সাবজেক্ট মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে।

৪. সংখ্যালঘু অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য কুরআন ও ইসলামী শিক্ষার পরিবর্তে তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ এবং নৈতিক শিক্ষা নামের সাবজেক্ট পড়ানো হবে।

৫. কমন সাবজেক্টের বাইরে কওমি ও আলিয়া ধারার মাদ্রাসাগুলো হাদিস, তাফসির, আরবি দুই পত্র, ফিকহ, সিরাহ, বালাগাত-মানতেক ইত্যাদি সাবজেক্টসমূহের জন্য যুগোপযোগী সিলেবাস তৈরি এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রস্তুত করা এবং তা যোগ্য শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশের সংবিধান পুরোপুরি পরিবর্তন করা জরুরি। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে যে ধরনের সংবিধান রচনা হওয়া প্রয়োজন ছিল সেই ধরনের সংবিধান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছরেও রচনা করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের ইচ্ছামতো সংবিধান সংশোধন করে মুজিব পরিবারের নিরাপত্তা বিধান ও আওয়ামী ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার যত ধারা যুক্ত করার তা করেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমাদেরকে এমন সংবিধান রচনা করতে হবে যে সংবিধান বাংলাদেশের সকল মানুষের অধিকার সমুন্নত করবে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার বিচার বিভাগকেও চরমভাবে ধ্বংস করে গেছে। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ; যেখানে গিয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে হলেও মানুষেরা তাদের ন্যূনতম মানবিক অধিকার রক্ষায় লড়াই করে যাবেন। বিচার বিভাগের কাজই হচ্ছে মাজলুমের পাশে দাঁড়িয়ে জালেমের জুলুমকে স্তব্ধ করে দেয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আওয়ামী সরকার বিচার বিভাগ দিয়ে শত শত মানুষকে জেলে পুরেছে, শত শত মানুষকে অন্যায়ভাবে খুন করেছে।

বিচার বিভাগকে স্বতন্ত্র স্বত্তা হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। দেশের শান্তি শৃংখলা, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে পুলিশের ভূমিকা অপরিহার্য। বিগত আওয়ামী সরকার সবচাইতে বেশি কলুষিত করেছে পুলিশ বিভাগকে। নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পুলিশকে সব অপরাধের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছিল।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত