ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে পতিত সরকার শুরু থেকে নির্মম বর্বরতা দেখিয়েছে। যত দিন গেছে সরকারের পৈশাচিকতা ততই বেড়েছে। প্রথমে পুলিশকে মারমুখী চেহারায় দেখা যায়। এরপর যুক্ত হয় আইনশৃঙ্খলায় নিযুক্ত অন্য বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর কিছু কিছু নৃশংসতা এমন ভয়াবহ ছিল, সেগুলো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়, এগুলো ঠিক আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা করছে কি না। বিশেষ করে গুম ও গুপ্ত কারাগারের বিষয়টি যখন সামনে এলো তখন বিষয়টি আরো চাউর হলো। কিছু কিছু আটক ব্যক্তি মুক্তি পাওয়ার পর এটি পরিষ্কার হতে থাকে যে, গুপ্ত কারাগারগুলোতে যে নির্যাতন সেল রয়েছে সেগুলোতে ভিনদেশীরা রয়েছে। তাদের কিছু সদস্যের দেহের গড়ন ও আচরণে নির্দয়তা আমাদের দেশের মানুষের সাথে মেলে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, জুলাই বিপ্লবে ভিনদেশীরা আন্দোলন দমানোর অভিযানে পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সহযোগী হয়েছে। গত মঙ্গলবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে আন্দোলনে আহতদের দেখে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আহতরা তাকে জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময় পুলিশের সাথে লোকেরা তাদের হিন্দি ভাষায় গালি দিয়েছে। এই আক্রমণকারীরা ছিল অধিকতর নির্দয় ও বর্বর। তারা খুব কাছে থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছে। তাজুল ইসলাম জানান, মামলার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলন কতটা নিষ্ঠুর ছিল হতাহতের সংখ্যা থেকে তা স্পষ্ট। আন্দোলন দমনের লক্ষণীয় দিক ছিল এতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ। আন্দোলনের শুরু থেকে মাঠের বিপ্লবীরা জানিয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন অংশে এ ধরনের বাহিনীর তৎপরতা দেখেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্নাইপার গ্রুপের অ্যাকশন। যুদ্ধে ব্যবহার হয় এমন দূরপাল্লার অস্ত্র থেকে গুলি করে পাখির মতো মানুষ হত্যা করেছে তারা। ঢাকা শহরে গুরুত্বপূর্ণ ভবন থেকে এই খুনে বাহিনীকে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করতেও দেখা গেছে। সশস্ত্র সদস্যদের বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। আন্দোলনের হটস্পটগুলো থেকে অনেকে অভিযোগ করেছে হিন্দিভাষী লোকদের উপস্থিতির। তারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে থাকলেও বাংলা বলতে পারেনি। এমন বহু ঘটনার ভিডিও ফুটেজও আছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে হবে। গুম থেকে ফিরে আসা অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের হিন্দি ভাষায় সওয়াল-জবাব করা হয়েছে। বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা অনেককে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে অনেকে শুনেছেন। একটি স্বাধীন দেশের বাহিনীর সাথে ভিন্ন একটি দেশের বাহিনীর সদস্যরা ঢুকে গুম-খুন-পীড়নের সাথে জড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। এই অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে প্রকৃত ঘটনা জাতির কাছে উন্মোচন করা না গেলে দেশের নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এমনও হতে পারে, বিদেশি বাহিনীর সাথে ষড়যন্ত্র করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকিতে ফেলতে পারে আওয়ামী লীগের মতো দেশবিরোধী অপশক্তি। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে।