ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষের ভূমিকা অপরিহার্য

আফতাব চৌধুরী
তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষের ভূমিকা অপরিহার্য

বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমি সে দেশেরই একজন সচেতন নাগরিক, বাস করি সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরে। বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে জাতীয় পুরস্কার (১ম) স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাস্থ ওসমানী মিলনায়তনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাকে এ পুরস্কার প্রদান করেন। এতে আমি অভিভূত উৎসাহিত, অণুপ্রাণিত বোধ করছি। অ্যান্টার্কটিকার জনমানবহীন মহাদেশ ছাড়া বাকি যে ক’টি মহাদেশ আছে, তার প্রায় সবগুলো স্পর্শ করার সুযোগ ও সৌভাগ্য আমার হয়েছে। প্রায় ১৫টি দেশে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করার সুযোগও আমি পেয়েছি। এ সুযোগ অনেকেরই হয়, তবে আমার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। নানা প্রয়োজনে বহু লোক নানা দেশে ভ্রমণ করেন। তারা সাধারণত বড় বড় শহরে বেশি সময় কাটান, সভা-সমিতি করেন। বন্যপ্রাণী বনভূমি ও পরিবেশ বিষয়ক নানা সেমিনার, সিম্পোসিয়াম, সম্মেলনে যারা যান বড় শহরে বিলাসবহুল হোটেলে উদ্বোধন অনুষ্ঠান করেন, বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে চলে আসেন। আমি বিভিন্ন কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছি। বড় বড় শহর ছাড়াও যেসব দেশে গিয়েছি সেগুলোর শহরে তো বটেই গ্রামাঞ্চলও দেখার সুযোগ আমি পেয়েছি। ব্রিটেনসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের বনজঙ্গল, আমেরিকা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভারত,পাকিস্তাননসহ বিভিন্ন দেশের অনেক গভীরে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। আফ্রিকার কিছু অংশও দেখেছি। সুতরাং আমার সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে এবং অন্যদের কাছে যা শুনেছি তার ভিত্তিতে কিছু অভিমত ব্যক্ত করছি। প্রাকৃতিক পরিবেশের কথাই বলতে যাচ্ছি। অনেক বক্তৃতা শুনি বা পোস্টার দেখি যাতে লেখা থাকে- ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’। শুনতে ভালোই লাগে। যেকোনো গাছ লাগালেই পরিবেশ বাঁচে না। আমাদের বলতে হবে, দেশি গাছ লাগান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচান। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে গেলে অপ্রাকৃতিক পরিবেশের কথা এসে যায়। পার্থক্য আমাদের গভীরভাবে বুঝতে হবে। যেকোনো গাছ লাগালে যদি প্রাকৃতিক পরিবেশ বেঁচে যেত তা হলে কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আমার বিস্মৃত অভিজ্ঞতার আলোকে নিম্নে ক’টি সুচিন্তিত পরামর্শ প্রদান করছি এবং নিশ্চিতভাবে বলছি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও আন্তরিকতা সাথে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশে কাঙ্ক্ষিত বনাঞ্চল সৃষ্টি হবে এবং অনিবার্য বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। পরিবেশ থাকবে সুস্থ, সুন্দর ও সবল। প্রাণীকূলের বসবাস উপয়োগী বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াসে এবং পরিবেশের উন্নয়নে দেশের সকল নাগরিককে অবশ্যই আন্তরিক উদ্যোগী হতে হবে, তাহলে সফলতা আসবেই। জনসংখ্যার চাপে বসতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির প্রয়োজন মিটাতে ক্ষুদ্রাকৃতি এ বাংলাদেশের বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে- ক্রমেই, সংকোচিত হয়ে আসছে বনভূমির পরিমাণ। অভাব দেখা দিচ্ছে কাঠ, বাঁশ, ফল-মূল এবং ওষুধপত্র তৈরির প্রয়োজনীয় বনজ দ্রব্যাদির। এভাবে আর ক’বছর চলতে থাকলে দেশে বনভূমির পরিমাণ শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। মানুষসহ প্রাণীকূল বেঁচে থাকবে না, দেখা দেবে বিপর্যয়, বিধ্বস্ত হবে সভ্যতা, বিপন্ন হবে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব। আমাদের দেশে প্রতি বছর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে প্রচুর পরিমাণে গাছের চারা রোপণ করা হয়, খরচ করা হয় কোটি কোটি টাকা। তার মধ্যে কয়েকটি গাছের চারা বেঁচে থাকে আর বড় হয় তা একটু পরীক্ষা, পর্যালোচনা করলে এবং পত্র-পত্রিকার সংবাদকর্মী নিয়ে গবেষণা করলে সার্বিক হাল অবস্থা সহজেই আঁচ করা যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণেই শেষ নয় প্রয়োজন যত্ন, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, আমরা এদিকে খুব কমই দৃষ্টি দান করে থাকি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত