ছাত্র রাজনীতির আমূল সংস্কার প্রয়োজন
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জুলাই বিপ্লব আমাদের জাতি গঠনে সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। সব জায়গায় সংস্কারের আলাপ জারি হয়েছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে। সংস্কার টেকসই করতে হলে রাজনীতি চর্চায় আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি। তবে রাজনৈতিক দলগুলো এই নিয়ে খুব বেশি উদ্যোগী মনে হচ্ছে না। দেশে যে ধারার ছাত্র রাজনীতি বিদ্যমান, সেখানে পরিবর্তন আনা সময়ের দাবি। প্রয়োজন ছাত্র রাজনীতিতে শুদ্ধাচারের চর্চা। বিগত দিনে ফ্যাসিবাদ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নিষ্ঠুরতা ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। আবরার ফাহাদের মতো বুয়েট শিক্ষার্থীদের নারকীয় কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সারা দেশে মাফিয়া সাম্রাজ্যের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ছাত্রলীগ। সঙ্গতকারণে এখন জাতির সামগ্রিক কল্যাণে এই সংস্কৃতি বদলে ছাত্রবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার কাজে হাত দেয়া অপরিহার্য।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না; এ নিয়ে আলোচনা বর্তমানে তুঙ্গে। এরই মধ্যে বহু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণ করতে গিয়ে বড় শূন্যতায় ফেলে দেয়া হয়। সেই শূন্যতার কুফল জাতি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। সেই সুযোগ ব্যবহার করে হাসিনা দানবে পরিণত হন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটিয়েছেন মূলত ছাত্ররা। তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের চেয়ে জরুরি হলো শুদ্ধতা ফিরিয়ে আনা। সেজন্য সব পক্ষের আলাপ আলোচনা প্রয়োজন। ছাত্র শিক্ষক ও রাজনৈতিক দলগুলো মিলে কীভাবে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে পারে তার পথ খুঁজতে হবে। ছাত্র রাজনীতি কলুষিত করার কারণগুলো শনাক্ত করতে হবে।
এ যাবৎকালে দেশের জাতীয় নেতৃত্ব ছাত্রদের দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। জাতীয় নেতৃত্বের মদদে চর দখলের মতো হল ও ক্যাম্পাস দখল করানো হয়েছে ছাত্রদের দিয়ে। এ ছাড়া চাঁদাবাজি ও পেশিশক্তি হিসেবে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করা হয়েছে। ছাত্রনেতারাও দলীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা জেনে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অর্থবিত্ত কামিয়ে ফুলেফেঁপে ওঠেন। তাই দেখা যায়, একবার কেউ ছাত্রনেতা হলে আর সহজে তিনি পদবি ছাড়তে চান না। এ জন্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা ‘আদু ভাইয়ে’ পরিণত হয়েছেন। বড় বড় ছাত্র সংগঠনে এখন একই সংস্কৃতি বিরাজমান। ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে তাকালে তা সহজে বোঝা যায়। বিষয়টি দৃষ্টিকটু হলেও সবাই দেখেও না দেখার ভান করেন। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর সাধারণত ২৩-২৪ বছরে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা। কোনো কারণে ড্রপ হলে আরো না হয় দু-এক বছর বেশি লাগতে পারে। এতে সব মিলিয়ে একজন ছাত্রনেতার বয়স ২৭-২৮ বছরের বেশি হতে পারে না। অথচ বড় কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স দেখা যাচ্ছে ৪০ ছুঁই ছুঁই। ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বে আদু ভাই সংস্কৃতির চর্চা বিষবৃক্ষ হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে জেঁকে বসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতিতে সংস্কার আনা অত্যাবশক। আগের মতো চাঁদাবাজি দখলদারি ও আধিপত্য বিস্তারের নীতি পরিত্যাগ করতে হলে নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্বে আনতে হবে। নেতা হলে তাকে নিয়মিত ছাত্র হতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।