হৃদরোগ : সচেতনতা ও প্রতিরোধের পথে আমাদের যাত্রা
একেএম রেজাউল করিম
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ছোট্ট কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ব্যস্ততার কারণে আমরা হৃৎপিণ্ডের যত্ন নেয়া ভুলে যাই। আমাদের হৃৎপিণ্ড প্রতিদিন এক লাখবার স্পন্দিত হয়, রক্ত ও পুষ্টি সারা শরীরে পাম্প করে। এটিকে বলা যায় আমাদের শরীরের ইঞ্জিন, যার প্রতি যত্ন নেয়া জরুরি।
বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যা হতে পারে অকাল মৃত্যুর কারণ। হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে অ্যানজিনা, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক অন্তর্ভুক্ত। বয়স ৭৫ বছরের নিচে হলে নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। হৃৎপিণ্ডের সমস্যার প্রভাব শরীরের অন্যান্য অংশেও পড়ে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সমস্যা বা ডিমেনশিয়ার কারণ হতে পারে।
সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রা : হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও প্রয়োজন। ধূমপান ত্যাগ এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আমরা হৃদরোগের ঝুঁকি একদম কমিয়ে ফেলতে পারি।
নারীদের ঝুঁকি : অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে যে, হৃদরোগ পুরুষদের মধ্যেই বেশি হয়। বর্তমানে নারীরাও সমানভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা তরুণ বয়সেও হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
ঝুঁকির চিহ্ন : হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে বুকের মাঝ বরাবর অস্বস্তি, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট এবং শরীরের অন্যান্য অংশে অস্বস্তি প্রকাশ পেতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
হৃদরোগ প্রতিরোধের উপায় : হৃদরোগ থেকে বাঁচতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
ধূমপান ত্যাগ : ধূমপান হৃদরোগের প্রধান কারণ। দু’বছর ধূমপান না করলে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন। ফল ও সবজির পরিমাণ বাড়ান।
নিয়মিত ব্যায়াম : সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ : দুশ্চিন্তা কমাতে মেডিটেশন বা ইয়োগার দিকে মনোনিবেশ করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষার জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যান।
গবেষণার দৃষ্টিকোণ : সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখিয়েছে, বিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সংসারে দুইজন একে অপরের খেয়াল রাখার কারণে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া, শারীরিক পরিশ্রম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
শেষ কথা : হৃদরোগ একটি মারাত্মক সমস্যা, কিন্তু সচেতনতা এবং কিছু ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এর ঝুঁকি কমাতে পারি। আজই গ্রহণ করুন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস- এটি আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য অমূল্য।
লেখক: সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ