রাজনীতি বা ব্যবসা : বর্তমান নেতাদের দায়িত্বহীনতা ও প্রজন্মের সংকট

একেএম রেজাউল করিম

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশের রাজনীতির বর্তমান চিত্র দুঃখজনকভাবে একেবারেই পরিবর্তিত হয়েছে।

আগে যেসব নেতা, তাদের জীবন ছিল আদর্শ ও নিষ্ঠার পরিচায়ক, তারা এখন আর সেই পথে হাঁটছেন না।

রাজনীতির যে আদর্শ ছিল, যা দেশের জনগণের জন্য কাজ করার এক তাজা উদাহরণ হয়ে উঠেছিল, তা এখন অনেকটাই বিস্মৃত। আজকের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের দায়িত্ব বুঝে রাজনীতি করেন না, বরং তারা যেন ব্যবসার মাঠে নেমে গেছেন। একে ‘রাজনীতি’ না বলে ‘ব্যবসা’ বলাই বেশি উপযুক্ত।

পূর্ববর্তী ষাট, সত্তর এবং আশির দশকের রাজনীতি ছিল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং মানুষের সেবার জন্য। তখন রাজনীতির নেতারা নিজেকে জনগণের সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেন। তারা আদর্শ, শিক্ষা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতি করতেন, যা বর্তমান সময়ে প্রায় বিলুপ্ত। তখনকার নেতাদের মধ্যে ছিল বৃহৎ হৃদয়, যাদের কাজের জন্য জনগণ তাদের সম্মান করতো। কিন্তু এখন সেই আদর্শ হারিয়ে গিয়েছে, আর রাজনীতি হয়ে গেছে এক ধরনের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ, যেখানে ব্যক্তিগত লাভই সবচেয়ে বড়।

বর্তমানে যারা রাজনীতি করছেন, তারা অনেকটা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। তাদের কাছে রাজনীতি আর জনগণের সেবা নয়, এটা একটি লাভের খেলা। যেভাবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়, তেমনি তারা রাজনীতিতে বিনিয়োগ করেন- মূল উদ্দেশ্য রিটার্ন পাওয়া। এই প্রক্রিয়া কর্মীদেরও প্রভাবিত করেছে। তারা কাজ করেন না আদর্শের জন্য, বরং কিছু লাভের আশায়।

আর এই লাভের আশায় যে তারা কতটা নৈতিকভাবে বিপথগামী, তা আজ আর কেউ সঠিকভাবে মাপতে পারে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখনকার রাজনীতির নেতারা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবছেন, আর তাদের কর্মীরা যেন তাতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে দলে আর্থিক লাভের পথেই হাঁটছে। তাই তো দলের নেতাদের প্রতি কর্মীদের আস্থা এখন একেবারেই কমে গেছে। তারা দলকে কোনো আদর্শের প্রতীক মনে করেন না, বরং এক ধরনের মেকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখছেন। আজকের যুগের রাজনীতি শুধুমাত্র নির্বাচনের আগে ভোটের প্রলোভন তৈরি করে, আর নির্বাচনের পরে দলীয় নেতারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সিদ্ধ করতে ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতি আমাদের সমাজের জন্য একটি বড় সংকটের ইঙ্গিত দেয়। যখন রাজনীতি আর জনগণের সেবা হতে থাকে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, তখন দেশ ও জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতা হারিয়ে যায়। এখন সময় এসেছে, আমাদের আগের আদর্শগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার, যাতে রাজনীতি আবারও মানুষের সেবায় ফিরে আসে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন আবার নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেম ও শ্রদ্ধার রাজনীতি দেখতে পায়।

লেখক: সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ