আয়নাঘরের আলামত যেন নষ্ট না হয়

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পতিত হাসিনার শাসনে মানবাধিকার লুণ্ঠনের ঘটনা প্রমাণ আকারে হাজির। এর একটি আয়নাঘর নামের গুপ্ত কারাগার পরিদর্শন করেছেন গুমবিষয়ক কমিশনের প্রতিনিধিরা। তারা সেখানে ছয়-সাত ফুট প্রশস্ত ও ১৫-১৬ ফুট উঁচু ছাদবিশিষ্ট ২২টি কুঠরি দেখতে পেয়েছেন। এগুলোতে বাইরের শব্দ ভেতরে এবং ভেতরের নির্যাতনে মানুষের আর্তনাদ বাইরে না আসে তা রোধে বড় চারটি অ্যাগজস্ট ফ্যান পাওয়া গেছে। আশঙ্কার দিক হচ্ছে, কুঠরিগুলোতে সংস্কার করা হয়েছে। এতে আলামত নষ্ট হয়েছে। এগুলো নতুনভাবে সাজানোর প্রস্তুতিও দেখা গেছে। অথচ বিচার নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধে প্রতিটি গুপ্ত কারাগার হুবহু সংরক্ষণ করা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার গুমের তদন্তে কমিশন গঠন করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনী ব্যবহার করে স্বৈরাচারী হাসিনার মদদে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গুমের তথ্য সংগ্রহ করছে এই কমিশন। কমিশন সদস্যরা ২৫ সেপ্টেম্বর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের কার্যালয়ে গিয়ে আয়নাঘরের সন্ধান পেয়েছেন। পহেলা অক্টোবর ডিবি ও সিটিটিসি কার্যালয় পরিদর্শন করে সেখানে কোনো বন্দি পাননি। বেশি গুমের অভিযোগ র‌্যাব-পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার নামে। এসব বাহিনীর একটি অংশ হাসিনার মদদে গুপ্ত কারাগার গড়ে তোলে। সেগুলো তদন্ত করে বের করতে হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের দুই নেতা শাহ মো: ওয়ালীউল্লাহ ও মোকাদ্দেস আলীকে ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেয়া হয়। তারা রাজধানীর গাবতলী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে সাভারের নবীনগরে অপহৃত হন। শিবির নেতাদের বহনকারী গাড়ির নম্বর, সুপারভাইজারের পরিচয়, র‌্যাবের একজনের নাম পাওয়া গেছে। বহনকারী গাড়িতে লেখা ছিল র‌্যাব-৪। হাসিনার শাসনে প্রায় ৭০০ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো হদিস মেলেনি দেড় শতাধিকের। প্রতিটি গুমের ঘটনার এমন বহু তথ্য প্রমাণ রয়েছে। যেগুলো ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ ছিল। অথচ পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে গুমের বিষয়ে যত অভিযোগ এসেছে; প্রতিটি অভিযোগ অস্বীকারের একগুঁয়ে নীতি অবলম্বন করে গায়ের জোরে এড়িয়ে গেছেন মাফিয়া হাসিনা। সময়মতো তদন্ত করলে বহু মানুষ প্রাণে বেঁচে যেতেন। এমনকি বাহিনীগুলোতে খুনি সদস্যের সংখ্যা কমানো যেত। বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সুযোগে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়েছে। কমিশন এরই মধ্যে জানিয়েছে, গুমের ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। এ অবস্থায় গুরুত্ব দিতে হবে আলামত রক্ষায়। কমিশন জানাচ্ছে, বাহিনীগুলো তদন্তে সহযোগিতা করছে।

সংবাদমাধ্যমে খবর, আয়নাঘরে চুনকাম হয়েছে, যাতে কিছু আলামত নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি গুরুতর। মনে রাখতে হবে, যারা গুমের সাথে জড়িত তাদের বিচার হতে হবে। এ জন্য বাহিনীর অন্য সদস্যদের সজাগ থাকতে হবে। আলামত নষ্ট হওয়ার সাথে কেউ সহযোগী হলে তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের জবানবন্দিতে বিমানবন্দর এলাকায় র‌্যাব-১-এর কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি গুপ্ত কারাগারের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিটি বাহিনীতে উচ্চপর্যায়ে রদবদল হয়েছে। তাদের সম্ভাব্য গুপ্ত কুঠরিগুলো নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সংস্কারকাজ কিংবা অন্য কারণ দেখিয়ে এসব স্থানে কোনো রদবদলে কেউ যেন জড়িত না হয়। আয়নাঘর সংস্কৃতি থেকে জাতিকে মুক্ত হতে হলে এর সাথে জড়িত প্রত্যেককে শনাক্ত করতে হবে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।