রাজনীতিতে সংস্কার নাকি সংস্কারের রাজনীতি?

জুবাইর হোসেন

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের শাসনভার যাদের কাঁধে এসেছে, তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য কী হওয়া উচিত? আগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করার অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হলে জনগণের নিকট তাদের যোগ্যতা, নিরপেক্ষতার ব্যাপারে প্রশ্ন ওঠে কি না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে দেশের রাষ্ট্রকাঠামোর ভার ন্যস্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা কি ছিল? প্রত্যাশা পূরণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কতটা অগ্রধিকার পেয়েছে? বিগত স্বৈরাচারী সরকারের শোষণ-দুর্র্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, প্রশাসন দলীয়করণ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে কোটা সংকারের হাত ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পলায়নকারি সরকারে ছায়াও কি মারাতে চায় বাংলাদেশের জনগণ? কাজেই দীর্ঘ পনের বছরের শাসন-শোষণের হাতিয়ার হিসাবে বিগত সরকারের ‘নিজ হাতে গড়া’ বিশেষ সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ ইত্যাতি সংস্কারের অবশ্যই দাবি রাখে। এ লক্ষ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। উক্ত কমিশন গুলো ৬ অক্টোবর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করার কথা এবং নব্বই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তা হস্তান্তর করবে। প্রতিটি কমিশন স্ব স্ব ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য সংস্কার করে দেশের বিভন্ন বিভাগে সুষ্ঠু কাঠামো ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। এদিকে গত শনিবার প্রথম দিনের সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ছাড়াও এদিন তিনটি আলাদা রাজনৈতিক জোটের সাথে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। এই বৈঠকের মতামত নিয়েই সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করবে বলে আগেই জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে। এই আলোচনায় নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে না রাখা, জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল, দেশের সব ইউনিয়নের নির্বাচিত পরিষদ বিলুপ্ত করার দাবিও জানায় বিএনপি। জামায়েতে আমির অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে দুটি রোডম্যাপের পাশাপাশি কিছু মৌলিক বিষয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। আগামী ৯ই অক্টোবর জাতির সামনে কী কী সংস্কার প্রয়োজন, তা তুলে ধরবে দলটি। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে দেয়া সংস্কারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের মধ্যে প্রধান হলো নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। সেটা আজ থেকে, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করে নির্বাচন কবে হবে, সেটার রোড ম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’ একইসাথে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কাজ না করতে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে পরামর্শ দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। প্রধান উপদেষ্টার সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপে গণঅধিকার পরিষদ অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাজের পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ প্রকাশ, আওয়ামী লীগের বিচার, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়ানোসহ ১২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে।