আমাদের এই সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে কৃষির উপর। যার পরিমাণ পূর্বে আরো বেশি ছিল। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮০ ভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। যদি আমরা জিডিপির দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাব যে, কৃষির অবদান ১৩.৪৭ শতাংশ সমীক্ষা ২০২১-২২। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষি খাতেই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এর সাথে যুক্ত বেশির ভাগ মানুষ অশিক্ষিত। তাদের নেই উপযুক্ত কৃষি জ্ঞান। তাই তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে অল্প জমি ব্যবহার করে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারে এবং ব্যয় কম করে বেশি লাভবান হতে পারে। মিশ্র কৃষি চাষ শুরু করতে হবে।
আমাদের দেশের একটা বড় অংশ ভাতের উপর নির্ভরশীল। তারা তিন বেলা ভাত ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষকে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙালি। কৃষকেরা যে ফসল উৎপাদন করছে তাতে তাদের সকল ধরনের ব্যয় বাদ দিলে খুব সীমিত লাভ দেখা যায়। যার কারণে তারা চাষাবাদে উৎসাহ হারাচ্ছে। দিন দিন পতিত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা মোটেই দেশের জন্য মঙ্গলকর নয়।
কৃষিতে সরকারের দেয়া ভর্তুকি যথেষ্ট নয়। শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কাঁচামাল আসে কৃষি থেকে। তাই শিল্প ক্ষেত্রে যাতে করে কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামাল যোগান দিতে পারে। তাই চাই কৃষিকাজে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কৃষকরা যতটুকু ফসল উৎপাদন করে। তার আবার ন্যায্য মূল্য পায় না, সঠিক বাজার ব্যবস্থার কারণে। হাত বদলের মাধ্যমেই মধ্যস্বত্বভুগীরা লুফে নিচ্ছে লভ্যাংশ। যাতে করে কৃষি খাত দিন দিন ক্ষতির মুখে পরছে। কৃষি খাতকে বাঁচাতে। চাই সঠিক বাজার ব্যবস্থা। কিছুদিন আগে একটা নিউজে দেখলাম এক ব্যক্তি তার জমিতে উৎপাদিত বেগুন গরুকে খাওয়াচ্ছে। গণমাধ্যম কর্মী কারণ জানতে চাইলে, সে বলে উঠে বাজারে ১ টাকা করে বেগুনের কেজি। বিক্রি না করে গরুকেই খাওয়াই। কতটা কষ্ট নিয়ে তার এই কার্যক্রম। অথচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেগুনের কেজি তখন ৮০ টাকা। এটা দেখে কার কেমন লেগেছে বা হয়েছে জানি না তবে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা। আরেকটি নিউজে দেখলাম- রাস্তার পাশে শসা ফেলে রেখেছে স্তূপ স্তূপ করে। জিজ্ঞেস করতেই বলে- শসা কেউ নেয় না, তাই ফেলে রেখেছি। যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শসার কেজি ৫০-৬০ টাকা। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থা। সরকারের উচিত কৃষকের পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারি ও খুচরা বাজার গড়ে তোলা। কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য অব্যাহত রাখা। মধ্যস্বত্বভুগীদের করাল গ্রাস থেকে কৃষি ও কৃষকে রক্ষা করা। প্রতি বছর কিছুটা হলেও কৃষি পণ্যতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে কৃষি অফিসের মাধ্যমে স্যার, কীটনাশক, বীজ, সেচ ফ্রিতে দেয়া। তবে আবার অবশ্যই সঠিক তদারকি মাধ্যমে কৃষি পণ্য বিতরণ করতে হবে। অনেক চক্রই সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করার ভাবনায় থাকে। তাদের দমন করতে হবে। কৃষি কর্মকর্তা যেন আবার স্বজনপ্রিয়তা না দেখায়। গ্রাম পর্যায়ে দেখা যায় চরম সিন্ডিকেট। যেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জনগণের জন্য বরাদ্দ সরকারি মালামাল নিজের আপনজনকে বেশি বেশি দিয়ে। নিজে আবার তাদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে। নিজ পরিবারের কাজে ব্যবহার করে। অনেকের কৃষিজমি নেই তবু বীজ, স্যার, কীটনাশক সংগ্রহ করে দোকানে বা প্রকৃত কৃষকদের কাছে বিক্রি করে। প্রকৃতি কৃষক পাচ্ছে না সরকারি সাহায্য। কৃষকদের অধিকার পূর্ণাঙ্গ রূপে ফিরিয়ে দিতে সরকারি মহলের তৎপর ভুমিকা পালন করতে হবে। দেশে উৎপাদিত কাঁচামালের সঠিক ব্যবহারের জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশে এবং বিদেশে সরকারিভাবে বাজার গড়ে তুলতে হবে। কৃষক বাঁচলে- বাঁচবে দেশ। সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ।