ঢাকা ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানি

ভারতকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে
বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানি

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চালালেও পতিত হাসিনা সরকার তেমন কোনো প্রতিবাদ জানানোর গরজ বোধ করেনি। এটি জাতি হিসেবে ছিল আমাদের জন্য অবমাননাকর।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসায় এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। সীমান্ত হত্যা নিয়ে ঢাকার শক্ত অবস্থান দেশবাসীকে আশার আলো দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের নিষ্ঠুরতার প্রমাণ মেলে ওই খুনে বাহিনীর গুলিতে কতজন বাংলাদেশি নিহত হচ্ছেন তাতে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৩১ বাংলাদেশি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে নিহত হন। ২০২১ ও ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২৩। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল, এই ১১ বছরে ৫২২ বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে মারা গেছেন।

গত ৭ অক্টোবর বিএসএফের গুলিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বাসিন্দা বাংলাদেশি নাগরিক মো: কামাল হোসেন নিহতের ঘটনায় দিল্লির কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। পাশাপাশি সব সীমান্ত হত্যার ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে গত বুধবার পাঠানো চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা বলেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠিতে লিখেছে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অব্যাহত আশ্বাসের পরও বিএসএফের হাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে, সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত।

এ ধরনের কর্মকাণ্ড দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নির্দেশিকাণ্ড১৯৭৫-এর লঙ্ঘন। সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ উঠলে বিএসএফ ‘আত্মরক্ষার জন্য’ ‘বাধ্য হয়ে’ গুলি চালানোর অজুহাত দাঁড় করায়। ভারতের এমন দাবি যে অসার ও সর্বৈব মিথ্যা তা না বললেও চলে।

কাঁটাতারে কাপড় আটকে যাওয়া নিরস্ত্র কিশোরী ফেলানী কিংবা মায়ের হাত ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে চাওয়া কিশোরী স্বর্ণা দাস কী করে অস্ত্রধারী বিএসএফের জন্য হুমকি হতে পারে? ভারতের পেনাল কোড কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনে নিরস্ত্র নাগরিক গুলি করে বা নির্যাতন করে মেরে ফেলার বিধান নেই। কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করলে তাকে গ্রেফতার করে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় স্বীকৃত সব আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রটোকল অগ্রাহ্য করে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ট্রিগার হ্যাপি : এক্সেসিভ ইউজ অব ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুুপস অ্যাট দ্য বাংলাদেশ বর্ডার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধী হিসেবে সীমান্ত হত্যার শিকার ব্যক্তিরা হয় নিরস্ত্র থাকেন অথবা তাদের কাছে বড়জোর কাস্তে, লাঠি বা ছুরি থাকে। এমন ব্যক্তিদের মোকাবিলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মিত প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে, যার জন্য ভারত সরকার তাদের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিয়েছে, এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই।

শুধু কিশোরী ফেলানী বা স্বর্ণা নয়, বিএসএফ নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষকে সীমান্তে গুলি করে বা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করছে। ভারত সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে; বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই। বিএসএফের আচরণ থেকে এটি স্পষ্ট, সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাথে ভারত আগ্রাসী।

অথচ বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ আধিপত্যবাদী আচরণ করলেও বৈরী প্রতিবেশী চীন বা পাকিস্তান সীমান্তে সে দেশের নাগরিকদের সাথে এমন আচরণ করে না। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সীমান্ত হত্যা নিয়ে দিল্লিকে যে যুক্তিসঙ্গত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা শুভসূচনা। আমরা আশা করি, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত