মিডলাইফ ক্রাইসিসের মতো ভয়ংকর ফাঁদ বয়সের ফ্রেমে আর কোথাও নেই। এই সময়টাতে অতীতকে সোনালি মনে হয়, বর্তমানকে অসহ্য। ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে- এটা ভাবতেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা মনকে চাপ দেয়। বয়সের মধ্যখানে কোনোকিছুতেই সে অর্থে মন বসানো যায় না। সবকিছুতে ঘোমট, সব আয়োজন বৃথা এবং সবার সঙ্গ- অহেতুক যন্ত্রণা আনয়ন করে। কি করছি এবং কেন করছি- দুর্ভাবনাতেই জীবনের সবকিছু রঙহীন এবং নিরর্থক মনে হয়। কোনোকিছুতে স্থির হওয়া- সাধ্যের অতীত। প্রিয় মানুষের খুঁত বের হয়, সন্তান-সংসার বিরক্তিকর লাগে এবং জীবনের যোগ-বিয়োগের ফলাফল খোঁজার চেষ্টা তীব্রভাবেই জাগে। জীবনের এই সময়টাতে জনবান্ধবের উপস্থিতি সহ্য হয় না, কোলাহল বিরক্তিকর লাগে, হৈ-হুল্লোড়ে মন টানে না কিংবা কারো বাড়তি কথা শোনার ধৈর্য আসে না। কেমন অচেনা এক পৃথিবীর বাসিন্দা হতে ইচ্ছা করে। কেউ বিরক্ত করবে না- লম্বা ঘুমে আয়ু কাটবে- এমন নিরীহগোছের নিরিবিলিতে জীবন আশ্রয় খোঁজে!
মিডলাইফ ক্রাইসিস সবার নির্দিষ্ট কোন বয়সে আসবে- এমন নিশ্চয়তা নেই। কারো যৌবনের প্রথমভাগে আসতে পারে আবার কারো বার্ধক্যের পূর্বভাগেও হানা দিতে পারে। এই সময়টা কতটা দীর্ঘায়িত হবে তা সঙ্গীর যত্নআত্তি এবং ভালোবাসার ওপর নির্ভর করে। মানুষের জীবন সার্কেলের এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি মানসিক সাপোর্ট লাগে। যৌবনের শরীরের টানে ভাটা কিংবা বিরক্তি লাগার এই ভয়ংকর সময়টাতে কেউ ভরসার হাত কাঁধে রাখুক, কেউ কনভিন্স করে কয়েকটি কথা বলুক কিংবা গল্পের কথক/শ্রোতা হোক কেউ- দেহ চিত্ত এটাই আকাঙ্ক্ষা করে। তখন তারুণ্যের খুনসুটি বাচ্চামি মনে হয় এবং বার্ধক্যের নৌকায় পাড়ি জমাতেও ইচ্ছা হয় না- বয়সের এই ফ্যালাসি জীবনকে অস্থির করে তোলে। কেউ হাত বাড়ালে সে হাত ধরার ইচ্ছা হয়!
সাধারণত মধ্যজীবনের সংকট ৪০-৬০ বয়সের এই ফ্রেমে হানা দেয়। তখন মানুষের মধ্যে বিষন্নতা, অনুশোচনা এবং উচ্চমাত্রার উদ্বেগ তৈরি হয়। মৃত্যু চিন্তা তাকে তীব্রভাবে ভাবায় এবং জীবনের সম্ভাব্য পরিণতির শঙ্কা তাকে নিন্দ্রাহীনতা উপহার দেয়। মিডলাইফ ক্রাইসিসে মানুষের মধ্যে খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্ম হয়, সন্দেহ বাতিকতা বাড়ে। সে যা প্রত্যাশা করে তা প্রাপ্তির খাতায় না হলে নিজেকে অসহায় অনুভব করে। জীবনের নামে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলে সে মানুষের মধ্যবয়সের সংকট তত দৃঢ় হয়। পছন্দের কর্ম না পাওয়া, জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মনের মিল না থাকা, সন্তানদের অবাধ্যতা কিংবা পিতামাতাকে হারানোর কারণে মিডলাইফ ক্রাইসিস জীবনকে তীব্র ঝুঁকি ও সংকটের দিকে টেনে নেয়। এই সময়টাতে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে পারে। নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে জীবনের উল্লাস-উপভোগ, আহ্লাদণ্ডশখ ত্যাগ করে দেয়। নিজের কাছে যা রয়ে যায় তা আফসোস। মধ্যবয়সের সংকটে মানুষ নিজেকে তুমুলভাবে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে কিন্তু কতক্ষণ একা একা শক্ত হাতে হাল ধরে রাখা যায়? একাকীত্ব তাকে ঘিরে ধরে। সঙ্গীর থেকে রেসপন্স না পেয়ে ভাবে- সেও হয়তো এড়িয়ে চলছে।