ঢাকা ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো

একেএম রেজাউল করিম
বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো

বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো, যখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পুনর্বহাল করার রায় ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়নের সুযোগ দেবে।

এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম পুনর্বহাল করা হয়েছে, যা বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অসমর্থতা এবং পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে তদন্তের সুযোগ প্রদান করবে। এটি বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তকে দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। মোটকথা, এই রায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় নতুন এক দিক খুলে দিতে পারে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালের মন্তব্য অনুযায়ী, এটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আইনগত ও রাজনৈতিক আন্দোলনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং দেশের বিচারিক স্বতন্ত্রতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। এর আগে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ষোড়শ সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল। এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হলে, ২০১৬ সালে আদালত এই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। কিন্তু ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ার পরও এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়। এই নতুন রায় বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, যা দেশের নাগরিকদের জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। এখন দেখার বিষয়, এই রায়ের বাস্তবায়ন কীভাবে হয় এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত পরিবেশে কেমন প্রভাব ফেলে। বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে এই পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, সরকারের উচিত হবে এই রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, যাতে আইন প্রয়োগে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ না ঘটে। এটি সুশাসনের প্রতিষ্ঠা এবং একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

লেখক : কলামিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত