ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মৌলিক কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম
মৌলিক কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বাংলাদেশের সরকারকে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী ও কার্যকর রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য নতুন কিছু প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। এসব প্রস্তাবনা প্রাথমিকভাবে সরকারের কার্যক্রমকে পুনর্গঠন, বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ ও টেকনোক্রেটিক শাসনব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এর মধ্যে সর্বপ্রথম যে প্রস্তাবটি উঠে এসেছে তা হলো, রেভ্যুলেশন সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, যা রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি করবে। প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার পরিচালনায় সিনিয়র সচিবদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে একটি রেভ্যুলেশন সেক্রেটারিয়েট গঠন করা হবে, যা রাষ্ট্রীয় বিপ্লবী কমান্ড রেজিমেন্টের কাঠামো, নীতিমালা ও সদস্য নিয়োগ বিষয়ে সহায়তা প্রদান করবে। এই সেক্রেটারিয়েটের মূল দায়িত্ব হবে নতুন শাসনব্যবস্থার পরিকল্পনা, গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা। এই প্রস্তাবনাকে যদি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় নীতিমালার স্পষ্টতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনা দেশের উন্নয়নের জন্য একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, বাস্তবায়নের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। টেকনোক্রেটিক সরকার, রাজনীতি ছাড়াই রাষ্ট্র পরিচালনা : একটি টেকনোক্রেটিক সরকার গঠনের প্রস্তাবও এই পরামর্শে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক পাশে রেখে দক্ষ প্রশাসনিক এবং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ধরনের সরকার জাতীয় স্বার্থের জন্য আরো কার্যকরী হতে পারে, কারণ এখানে রাজনৈতিক বিতর্ক বা দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে সাধারণ জনগণের কল্যাণ এবং দক্ষতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে, টেকনোক্রেটিক সরকার গঠনের বিপরীতে কিছু মানুষের অভিযোগ হতে পারে যে, এই সরকার জনগণের প্রতিনিধি নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব জনগণের সাথে সরাসরি সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে দেশের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ. দক্ষতার প্রতীক : এছাড়া, রেভল্যুশনারি কমান্ড রেজিমেন্ট গঠনের পর ৭ জন সেক্টর বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রস্তাবও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আইন, সিভিল প্রশাসন, সামরিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এসব বিভাগে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে উন্নয়ন ঘটবে। তবে, এদের নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব বা দুর্নীতির সম্ভাবনা রোধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ না হয়, তবে তা রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি লাভ : প্রস্তাবনায় সর্বশেষ যে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে তা হলো, *রেভল্যুশনারি কমান্ড রেজিমেন্টের প্রধানকে ‘ডেপুটি হেড অব গভর্ণমেন্ট’* হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করার পরিকল্পনা। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি শাসনব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে। তবে, এর বাস্তবায়নের সময় কীভাবে সরকারের অব্যাহত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রমে নতুন যুগের সূচনা সম্ভব হতে পারে। তবে, এর বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল দেশের উন্নয়নে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হবে। বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ, টেকনোক্রেটিক সরকার এবং নতুন শাসন কাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তবে সঠিক প্রয়োগ এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব ভুলে গেলে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পরবর্তীতে সরকারের উচিত হবে, এসব পরামর্শের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া, যাতে জনগণের কল্যাণে তা কার্যকরী হয়।

লেখক : কলামিস্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত