ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চলমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

চলমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

রাজধানীবাসীর নিত্যকার সঙ্গী হয়ে রয়েছে যানজট ও মশার উপদ্রব। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে এ নিয়ে বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলা হলেও তার বিন্দুমাত্র সমাধান হয়নি। নগরবাসীর অবস্থা এখন এমন হয়েছে, ঘরে থাকলে মশার যন্ত্রণা, বাইরে গেলে যানজটের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। মশার উপদ্রব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা মরণঘাতী ডেঙ্গুকে অনেকটা মহামারির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডেঙ্গুতে ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি। এ এক ভয়াবহ চিত্র। ডেঙ্গুর প্রকোপ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এবং তা বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। মশা নিধনের মূল দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের হলেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এ কাজে বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধু উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ব্যয় করে ১১৪ কোটি টাকা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এক্ষেত্রে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও মশা নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক, বরং বেড়ে চলেছে। মশা নিধনে বরাদ্দকৃত অর্থ যে লুটপাট করা হয়, তা নতুন কোনো বিষয় নয়। জনগণের এই অর্থ সাবেক দুই মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তছরুফ করে বলে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দুই মেয়র এখন পলাতক। এখন যারা দায়িত্বে, তারাও দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীর রেহাই মিলছে না। অন্যদিকে, যানজট নিরসনেও কোনো উদ্যোগ নেই। বরং বেড়েই চলেছে। এমনকি, ছুটির দিনেও তা তীব্র আকার ধারন করেছে। এই দুই ক্ষেত্রেই পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি মানুষের বিরাগ সৃষ্টির জন্যই এসব করা হচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পাহাড়সম সমস্যা ও সংকট নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। তার রেখে যাওয়া নিত্যপণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট, মশার উপদ্রবসহ জনভোগান্তির মতো সমস্যাগুলো এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এ সরকার যাতে এসব ভোগান্তি দূর করতে না পারে, জনসাধারণের মন বিষিয়ে ওঠে, এ নিয়ে নিরন্তর ষড়যন্ত্র চলছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রাজধানীতে যানজট সৃষ্টির জন্য পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার রিকশা ও অটোরিকশা পাঠিয়েছে। প্রায় দশ লাখ রিকশা ও অটোরিকশা এখন রাজধানীতে অবাধে চলছে। এগুলো এতটাই বেপরোয়া যে, ভিআইপিসহ মূল সড়কে নির্বাধে চলাচল করছে। ট্র্যাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশও এগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করছে না। ফলে মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে সড়ক ভেঙে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ অন্যান্য মহাসড়কেও অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসবই যে, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ তা বুঝতে বাকি থাকে না। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে তারই দোসরদের সিন্ডিকেট দায়ী, তাও স্পষ্ট। জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসররা সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করে দিতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা লুটপাট ও অর্থপাচার করে দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে নিয়ে গেছে। অর্থনীতি পুনর্গঠনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। হাসিনার ভেঙে দেয়া রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করছে। এর মধ্যেই হাসিনা ও তার প্রভু মোদির দোসররা অপকর্ম ও অপতৎপরতা জোরদার করেছে। এ ব্যাপারে সরকার ও ছাত্র-জনতাকে সদা সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী দৃশ্যমান সমস্যা নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু এবং শত শত আক্রান্ত হওয়া কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। এসব সমস্যার পেছনের কারণ এবং কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সিটি করপোরেশনে মশা নির্মূলে বরাদ্দকৃত অর্থ কেন অপচয় হচ্ছে এবং কারা এর সাথে জড়িত, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। রাজধানীসহ মহাসড়কে এলাকাভিত্তিকভাবে নিয়োজিত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা কেন যানজট নিরসন বা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা চাইতে হবে। এখন আর পুলিশের ট্রমার মধ্যে থাকার কোনো কারণ নেই। তাদের পুরোপুরিভাবে নিজ দায়িত্বে আত্মনিবেদিত হতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যের সিন্ডিকেট যত দ্রুত সম্ভব ভেঙে দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পণ্যমূল্য নিশ্চিত করার ওপর সরকারের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত