ঢাকা ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশের উন্নয়নে বড় হুমকি

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট
প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশের উন্নয়নে বড় হুমকি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মানসিক পরিশুদ্ধতা, উন্নত রুচি ও সংস্কৃতিবার বার প্রত্যাশা করেছে মানুষ। এও প্রত্যাশা করেছে, দেশ ও জাতি গঠনে, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এদের মাধ্যমে বড় ধরনের জাগরণ ঘটবে। দেশের উন্নয়নসহ হতদরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। কিন্ত জনগণের প্রত্যাশা শুধুই হতাশায় রূপ নিচ্ছে। দেশটা কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে পারছে না। জনগণ শুধু অসহায়ের মতো দেখছে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একে অপরের প্রতি আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ আর আক্রোশ প্রতিহিংসাপ্রবণ বক্তব্য, যে আক্রোশ আক্রমণের মধ্যে দলীয় ব্যর্থতার চেয়ে ব্যক্তিবিদ্বেষ, ব্যক্তি কুৎসা অতিমাত্রায় ফুটে ওঠে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারো অস্থির হতে শুরু করেছে।

তবে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন যে, এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কখনোই সুসম্পর্ক তো দূরের কথা, স্বাভাবিক সম্পর্কও ছিল না। তারা একে অপরকে শত্রু ভাবে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। সব সময় তাদের মধ্যে প্রতিহিংসা কাজ করে। এই স্বাভাবিক সম্পর্ক না থাকার কারণে সংস্কৃতিগতভাবে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেমন সমৃদ্ধ হতে পারেনি, ঠিক তেমনি দেশ, জনগণ, উন্নয়ন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার। উভয় দলের সহনশীল ও উদার মনোভাব একে অপরের প্রতি থাকতে হবে। এই সংস্কৃতিও ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বিরোধী পক্ষেরও উচিত সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করা। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে রাজনৈতিক দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।

এই বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবের কাছে দেশের সবকিছু জিম্মি হয়ে পড়বে। এর প্রধান কারণ ক্ষমতার লোভ। দেশে যত রাজনৈতিক দল রয়েছে, সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতায় যাওয়াই যদি একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তবে সেক্ষেত্রে জনগণ উপেক্ষিত হবেই। আর সংঘর্ষ, হানাহানিও বন্ধ হবে না। এত সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার মধ্যেও আমরা চাই দেশে একটি সুস্থ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ধারা গড়ে উঠুক। স্বাধীনতার অনেক স্বপ্নের একটি ছিল স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা কায়েম করা। যেখানে মানবিক অধিকার সমুন্নত থাকবে। বস্তুত তা হয়নি। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর একদল লোক মেতে ওঠে লুণ্ঠন আর হত্যায়। সমাজে বিশৃঙ্খলার বীজ রোপিত হয়। সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের স্বপ্ন ভুলুণ্ঠিত হতে শুরু করে। আমাদের সামাজিক অধঃপতনের অনেক কারণ। তবে অন্যতম কারণ বৈষম্য। সমাজে নানা ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান। এর মধ্যে ধর্মীয় এবং অর্থনীতি- এই বিশেষ দু’টি কারণে সমাজ সবসময় অস্থিতিশীল থাকে। চলমান অসহিষ্ণুতার পেছনেও এ দু’টি কারণ রয়েছে মনে বলে করি। বিগত চার দশকে এদেশে একশ্রেণির লুটেরা, লুম্পেন সম্পদের পাহাড় গড়েছে। অপরদিকে মধ্যবিত্তের অনেকেই নেমে গেছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর্থিক অসঙ্গতি সাধারণের মধ্যে সার্বক্ষণিক চাপা ক্ষোভ তৈরি করছে। কাঙ্ক্ষিত জীবন অর্জনে ব্যর্থতা সমাজে তৈরি করছে অসম প্রতিযোগিতা। বেকারত্ব সৃষ্টি করছে হতাশা। একই সমাজে উচ্চ শ্রেণির বর্ণাঢ্য জীবন নিম্নবিত্তকে ঈর্শাকাতর করছে। প্রেমে পরাজয় জন্ম দিয়েছে প্রতিহিংসার। ধর্মীয় গোঁড়ামির ফলে বেড়েছে উন্মাদনা। অযোগ্য ব্যক্তির উত্থান এবং যোগ্যতমের পতনে তৈরি হয়েছে বিভেদ।

সমাজের এই অসম বাস্তবতা সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। তারা মানসিকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। দেশের সমাজ জীবন অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছে রাষ্ট্র পরিচালকগণ। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে আর্থিক বৈষম্য। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ যেখানে মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খায়, সেখানে লুটেরা শ্রেণি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিত্তবৈভবে আয়েশি জীবনযাপন করে। তারা আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, দুবাই, কানাডা, মালয়েশিয়া, লন্ডনে সেকেন্ড হোম গড়ে তোলেন। হাওয়া বদলাতে উড়াল দিয়ে চলে যান পৃথিবীর নামি-দামি সৈকতে। বিনোদনের জন্য বেছে নেন জগৎসেরা সব এমাউজমেন্ট হোটেল। তাদের ব্যাংক হিসাবে থাকে কোটি কোটি টাকা। অপরদিকে দেশের সাধারণ নাগরিক তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পায় না। চিকিৎসার খরচ জোটে না। করতে পারে না মাথাগোঁজার একটু খানি ঠাঁই।

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত