ঢাকা ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নানা ইস্যুতে জনদুর্ভোগ

নানা ইস্যুতে জনদুর্ভোগ

স্বৈরাচারি শাসনের ১৬ বছরে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নামতে পারেনি। কালেভদ্রে পুলিশের কাছে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও জনদুর্ভোগ ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির অজুহাত তুলে অনুমতি দেয়া হয়নি। অনুমতি দেয়ার পরও নাশকতার মিথ্যা অভিযোগ তুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে ভণ্ডুল করে দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর সে অবস্থা আর নেই। তবে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সুযোগ ব্যবহার করে স্বৈরাচারের দোসররা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্পিরিটকেই নস্যাৎ করতে চাইছে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্লাটফর্ম থেকে নানা রকম দাবি-দাওয়া তুলে যত্রতত্র রাজপথ অবরোধ ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে অর্ন্তবর্তী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা দেখা গেছে। ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোড জাংশন শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষকালব্যাপী অবস্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারি শাসন ফ্যাসিবাদে পরিনত হয়েছিল। এরপর গত এক দশকে একদিনও কোনো রাজনৈতিক দলকে শাহবাগে অবস্থান বা জনসমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। স্বৈরাচারের দোসররা প্রথমে শাহাবাগে হিন্দুদের নামে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সমাবেশ ডেকেছিল। এরপর সচিবালয়ে আনসারদের অবরোধ, শাহবাগে রিকশা শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের সমাবেশের ডাক, সাভার-আশুলিয়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের অবরোধ-তাণ্ডব ইত্যাদি ইস্যুগুলোকে যথেষ্ট সহনশীলতার সাথে মোকাবিলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে দেশের অর্থনীতি যখন একটি স্থিতিশীল অবস্থায় উপনীত হওয়ার পথে তখন ভারতীয় প্রভাবে গার্মেন্ট খাতে ক্রয়াদেশ বাতিলের মতো কিছু নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির সূচকে নতুন সম্ভাবনা উঁকি দিতে শুরু করেছে। এহেন বাস্তবতায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে একটি ভারতীয় মালিকানাধীন গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধের কারণে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের দাবি-দাওয়ার বহর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো এবং ভারতীয় মিডিয়ার প্রপাগান্ডার পেছনে ভারত সরকার ও আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের যোগসাজশ এখন ওপেন সিক্রেট।

ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মীমাংসিত ইস্যু পদত্যাগপত্রের নামে নতুন করে টেনে এনে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, ভারতের ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগের সমাবেশের গুজব ছড়ানো এবং আবারো গার্মেন্ট শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাথে ভারতীয় সংশ্রব সম্পর্কে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে ছাত্র-জনতা ও সরকার সব বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। আর কোনো ইস্যুতে শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির যে কোনো অপপ্রয়াস রোধ করতে চায় সরকার। যেখানে বিগত দেড় দশক বিরোধী মতের কোনো সভাসমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। এখন পরিবর্তিত বাস্তবতায় পতিত স্বৈরাচারের দোসররা নানা ইস্যুতে সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইলেও সভাসমাবেশের মতো মৌলিক অধিকার রুদ্ধ করতে চায়না সরকার। তবে যত্রতত্র রাজপথ দখল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা আইনসিদ্ধ নয়। বিশেষত শাহবাগের আশপাশে দেশের একমাত্র পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ), বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় জাদুঘরসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সংযোগস্থল হওয়ায় এখানকার রাস্তা অবরোধের প্রভাব পুরো ঢাকা শহরেই দুর্বিষহ যানজটের সৃষ্টি করে। এ কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শাহবাগের বদলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তার এই আহ্বান অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই প্রস্তাব সম্পর্কে ডিএমপিকেও একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে আসা উচিত। দেড় দশকের স্বৈরাচারি শাসনে দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়লেও অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে চায় না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত