রেললাইনের সংস্কার জরুরি

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর দীর্ঘসময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। এতে লাইনচ্যুত সাতটি বগিসহ প্রায় দেড়শ গজ লাইন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রেলস্টেশনগুলোয় ভালো মানের সেবা বিদ্যমান থাকলে যাত্রীদের এতটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। দেশে ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। এতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রেলের যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থা। লাইনচ্যুত হওয়া পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে যাত্রী ছিলেন প্রায় পৌনে ৯০০। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলা অবস্থায় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। জরাজীর্ণ রেললাইন পেরোতেই পরপর তিনটি স্থানে লোহার পাত ভেঙে যায়। একইসঙ্গে লাইনের পাশে থাকা চারটি পয়েন্ট বক্স দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে। অনুমান করা যায়, গতি বেশি থাকলে এ দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতো। গত শুক্রবার ভোর থেকেই প্লাটফর্মগুলোয় যাত্রীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাতটি প্লাটফর্ম ভরে যায় বিভিন্ন বয়সি যাত্রীর উপস্থিতিতে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা সারা দেশ থেকে কোনো ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেনি। যেসব ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে যথাসময়ে ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেগুলোর কোনোটিই ছেড়ে যায়নি। এতে করে কমলাপুর স্টেশনে আটকা পড়ে শত শত যাত্রী। কমলাপুর স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীদের অনেককেই বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে। এ দুর্ঘটনার পর জরাজীর্ণ রেললাইনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বস্তুত দেশের রেললাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অনেক স্থানে রেলপথের অবস্থা অত্যন্ত জরাজীর্ণ। প্রায়ই বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খোলা থাকে। রেললাইনের অনেক স্থানে রয়েছে পাথর স্বল্পতাও। ফলে প্রায়ই ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জানা যায়, সারা দেশে বিদ্যমান রেলপথের অর্ধেকের বেশি এখনো চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি রেলব্রিজগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। এ অবস্থায় রেললাইন ও ব্রিজগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত সরকারের আমলে জনগুরুত্বপূর্ণ ও অর্থনীতির জন্য সুফলদায়ক বিবেচনায় রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে সেগুলো উপযোগিতা হারিয়েছে এবং সরকারি অর্থের অপচয় ঘটেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এমনটি হতো না। বস্তুত লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেল বিভাগ গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই জরাজীর্ণ রেললাইনের সংস্কারের পাশাপাশি রেলওয়ের সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ট্রেন লাইনচ্যুতিসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে।